বাস গিয়েছে ভোটে, ভোগান্তি দুই জেলায়

বৈশাখের চাঁদি ফাটা দুপুর। লাঠি ঠুকে ঠুকে কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়ালেন সত্তোরর্ধ্ব গীতালি মণ্ডল। নুইয়ে পড়া মাথাটা তুলে শুকনো মুখে কাউন্টারে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘একটা টিকিট দেবে বাবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

সুনসান বাসস্ট্যান্ড।— নিজস্ব চিত্র

১) বৈশাখের চাঁদি ফাটা দুপুর। লাঠি ঠুকে ঠুকে কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়ালেন সত্তোরর্ধ্ব গীতালি মণ্ডল। নুইয়ে পড়া মাথাটা তুলে শুকনো মুখে কাউন্টারে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘একটা টিকিট দেবে বাবা। তেহট্ট যাব।’’ গীতীলিদেবীর কাতর অনুরোধ ঠেলতে পারলেন না লোকটি। ‘‘বসুন, পরে কোনও বাসে আপনাকে তুলে দেব।’’— বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করেন তিনি। সেই আশায় ভর দিয়ে ছায়ায় সরে গিয়ে বসেন বৃদ্ধা।

Advertisement

২) টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন করিমপুরের বাসিন্দা মৃন্ময় বিশ্বাস। ততক্ষণে বাসের সবকটা আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছে। মৃন্ময়বাবু কাউন্টারে গিয়ে বললেন, ‘‘দাদা বসব না, দাঁড়ানোর জায়গা পেলেই হবে। একটি টিকিট দিন।’’ তাতেও ঘন ঘন মাথা নাড়েন ‘দাদা’।

৩) ঘণ্টাখানেক ধরে বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন মাজদিয়ার বাসিন্দা সুফল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘কখন থেকে বাস ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি। বাস যে কখন আসবে কে জানে।’’

Advertisement

মঙ্গলবার দিনভর এই ছিল কৃষ্ণনগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস বা করিমপুর বাস টার্মিনাসের চিত্র। শুধু এ জেলাই নয় একই চিত্র দেখা গিয়েছে পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদেও। তবে শুধু মঙ্গলবার নয়, আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার একই ভোগান্তি হবে বলে নদিয়া জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুই জেলায় ভোট। ভোটকর্মীদের যাওয়া-আসার জন্য জেলার বেশির ভাগ তুলে নেওয়া হয়েছে। ভোট শেষে বৃহস্পতিবার রাতে বাসগুলি ছাড়া হবে। নদিয়া জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সম্পাদক অশোক ঘোষ জানান, জেলায় বিভিন্ন রুটে ৬৫০টি বাস চলে। ভোটের জন্য হাতে গোনা দু’একটি বাস ছাড়া সব ক’টি বাস প্রশাসন তুলে নিয়েছে। ফলে ভোট না শেষ হওয়া পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। এ দিকে, মুর্শিদাবাদে বাস মালিক সংগঠনের পক্ষে রথীন মণ্ডল বলেন, ‘‘ভোটের জন্য জেলার বিভিন্ন রুটের ছ’শো থেকে সাড়ে ছ’শো বাস তুলে নিয়েছে প্রশাসন।’’

নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের জন্য এ বার ৮৩০টি বাস লাগছে। তাই জেলার বাসগুলি ছাড়াও বাকি বাস হুগলি থেকে আনা হয়েছে। তা ছাড়াও ৯৫০টি ছোটগাড়ি, লরি-সহ অন্যান্য গাড়ি নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কৃষ্ণনগর, তেহট্ট, রানাঘাট ও কল্যাণীতে বাসগুলি রিপোর্টিং করেছে। সকালের দিকে বাসগুলি রিপোর্টিং করতে যাওয়ার সময় বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী তুলে নিয়ে গিয়েছে। ফলে সকালের দিকে ভোগান্তি খানিক কম হলেও, বিকালের দিকে ভোগান্তি বেড়েছে। বাস না পেয়ে অনেককে ভাড়া গাড়িতে চেপেছেন।

তেহট্ট মহকুমা এলাকায় রেললাইন না থাকায় শুধুমাত্র বাস পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া জেলার অন্যান্য মহকুমার ওপর দিয়ে রেললাইন গেলেও ওই সব মহকুমায় বাস পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল এমন অনেক এলাকা রয়েছে। ফলে এ দিন থেকে জেলাজুড়ে বাসযাত্রীদের ভোগান্তি শুরু হয়েছে।

নদিয়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘ভোটের সময় খুব প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বেরোন না বলেই চলে। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন