তল্লাশির নামে তাণ্ডব, ক্ষোভে ফুঁসছে ফরাক্কা

পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন নিরীহ এক যুবক। জখম হয়েছেন আরও একজন। পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে রবিবারেই। সোমবার সকালে ফের অভিযোগ উঠল, তল্লাশির নামে পুলিশ গ্রামের লোকজনকে বেধড়ক মারধর করেছে। ভাঙচুর করেছে ঘরের জিনিসপত্র।

Advertisement

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

বাম-কংগ্রেস এবং তৃণমূলের পিকেটিং। রঘুনাথগঞ্জে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন নিরীহ এক যুবক। জখম হয়েছেন আরও একজন।

Advertisement

পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে রবিবারেই।

সোমবার সকালে ফের অভিযোগ উঠল, তল্লাশির নামে পুলিশ গ্রামের লোকজনকে বেধড়ক মারধর করেছে। ভাঙচুর করেছে ঘরের জিনিসপত্র।

Advertisement

ফরাক্কার মহেশপুর, নয়নসুখ, অর্জুনপুর ও মহাদেবনগর এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছিল। রবিবার তারই প্রতিবাদে ফরাক্কার জিগরিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। টানা অবরোধে ব্যাপক যানজট হয় জাতীয় সড়কে। অবরোধ তুলতে এসে পুলিশের সঙ্গে দনতার খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়।

অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে নিহত হন বলিদাপুরের বাসিন্দা জামাল শেখ (২৬)। জখম হন ন’জন পুলিশকর্মী ও আট জন বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তেজিত জনতা ১৫ টি সরকারি বাস ভাঙচুর করেছে। ভেঙে দিয়েছে পুলিশ ও বিডিও-র গাড়িও।

সেই ঘটনায় রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ ২৩ জনকে গ্রেফতারও করেছে। ঘটনার পর থেকে গুলি চালানো নিয়ে চাপানউতোর চলছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শূন্যে গুলি চালানো হয়।

রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা রবিবার জানান, পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে শূন্যে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়তে হয়। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই সুরেই সুর মিলিয়েছেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য নিহতের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এমনটা চললে তো কিছুই করা যাবে না। পুলিশ যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। নিহত জামালের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। তিনি অবরোধেও সামিল হননি। অথচ গুলিতে মারা গেলেন তিনিই। অভিযোগ, রবিবার রাতেও পুলিশ নিরীহ লোকজনের বাড়িতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ একাধিক বাড়ির দরজা ভেঙেছে। বাড়ির সামনে রাখা মোটরবাইক, টুকটুক ভাঙচুর করেছে। জিগরির মোড়েই হোটেল আবুল হোসেনের। তাঁর ছেলে মোবারক শেখের অভিযোগ, “ দাদা আফসারুল হোটেল বন্ধ করার সময় পুলিশ তাকে ধরে বেধড়ক মারধর করে তুলে নিয়ে গেছে। অথচ অবরোধের সময় সে হোটেল সামলাচ্ছিল।”

যদিও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশুমান সাহা পুলিশি অত্যাচারের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এবং তা চলবেও।” সোমবার ধৃত ২৩ জনকে জঙ্গিপুর আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৬ জনকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

ফরাক্কার ওই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ১২ ঘন্টার জঙ্গিপুর মহকুমা বন্‌ধ ডেকেছিল কংগ্রেস ও সিপিএম। সঙ্গে ছিল এসইউসিও। বন্‌ধে বেসরকারি বাস চলেনি। জঙ্গিপুর আদালত- সহ কিছু স্কুল ও দোকানপাঠ বন্ধ থাকলেও সামগ্রিক ভাবে বন্‌ধের তেমন প্রভাব পড়েনি। একাধিক মিছিল ও পিকেটিং ছিল কংগ্রেস ও বামেদের। পাশাপাশি রাস্তায় নামে তৃণমূলের সমর্থকেরাও। প্রতিটি মোড়ে, অফিস, ব্যাঙ্কের সামনে পাহারা ছিল পুলিশের। এ নিয়ে বড় ধরনের কোনও অশান্তি ঘটেনি।

বন্‌ধে ভাল সাড়া মিলেছে বলে দাবি করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, পুলিশ নিজেদের গুলি চালানোর দোষ ঢাকতে এখন তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষের নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। ফরাক্কার জিগরির ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। তৃণমূলের দাবি, সিআইডি তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বের করুক।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলেন, “এ দিনের জঙ্গিপুর মহকুমা বন্‌ধ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সব কিছুতেই বনধের রাজনীতিকে এখন হাতিয়ার করে বাঁচতে চাইছে বাম ও কংগ্রেস। জঙ্গিপুরের মানুষ তাদের প্রত্যাখান করেছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement