উন্নয়নের ঢালাও প্রতিশ্রুতিই পুরভোটে হাতিয়ার সব দলের

পুরভোট কবে হবে ঠিক নেই। তবে পুরভোটের লড়াই নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। পুরসভা করার কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানির পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়নের ঢালা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তারা। পুরবাসীরও বক্তব্য, রাজনীতি নয়, ‘নামের পুরসভা’কে ‘সত্যি পুরসভা’ হয়ে উঠতে দেখতে চায় তারা।

Advertisement

সৌমিত্র শিকদার

রাণাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০১:০৬
Share:

হাল ফিরবে। আশায় শিমূলতলার বাসিন্দারা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

পুরভোট কবে হবে ঠিক নেই। তবে পুরভোটের লড়াই নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। পুরসভা করার কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানির পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়নের ঢালা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তারা। পুরবাসীরও বক্তব্য, রাজনীতি নয়, ‘নামের পুরসভা’কে ‘সত্যি পুরসভা’ হয়ে উঠতে দেখতে চায় তারা।

Advertisement

লোকজনের চাহিদা খুব বেশি নয়। পাকা রাস্তা, নিকাশিনালা, আলো আর আবজর্না ফেলার একটা বন্দোবস্ত ছোট, ছোট সব আশা। দলুইপুরের বধূ মাজেদা মণ্ডল যেমন বলেন, “শুনছি আমরাও নাকি শহরের মানুষ হয়ে যাচ্ছি। নিশ্চয়ই অনেক উন্নতি হবে। আমাদের আর দুঃখ থাকবে না।” এই দুঃখ বলতে, পানীয় জল নিতে অন্য পাড়ায় যাওয়া, বর্ষায় জল বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো। হরিণঘাটা ১ পঞ্চায়েত এলাকায় নিকাশিন জন্য ড্রেন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, কয়েক দিনের মধ্যে তার একটা অংশ ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জু দে বলেন, “দেখছেন নর্দমার অবস্থা। তৈরির কয়েক দিনের মধ্যে ভেঙে গিয়েছে। আমাদের বাড়ি রাস্তার চেয়ে নিচুতে হওয়ায় বৃষ্টি হলে সব জল বাড়িতে ঢুকে যায়। আশা করছি পুরসভা হলে আমাদের এই দুঃখ দূর হবে। পরিকল্পনা করে ড্রেন তৈরি হবে।” স্থানীয় বধূ সুমা হীরা বলেন, “মাটির তলা দিয়ে পাইপ গিয়েছে। অথচ, আজও বাড়ি-বাড়ি জলের ব্যবস্থা হল না। রাস্তার ধারে দু-একটি টাইমকল থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।” এখনও রাস্তা পাকা না হওয়ায় একরাশ ক্ষোভ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আনন্দপুর সর্দারপাড়ার মানুষগুলো। গোপাল রোডের বাসিন্দাদের দুঃখ অন্য জায়গায়। তাঁদের বাড়ির সামনে দিয়ে ড্রেন আছে। কিন্তু তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অনেক জায়গায় জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বধূ দীপালি নাথ বলেন, “নিয়ম মেনে এই ড্রেন তৈরি করা হয়নি। তাই, ঠিক মতো জল যেতে পারে না। মশার উপদ্রব হয় ড্রেন ও জঙ্গল পরিষ্কার করা হয় না। আশা করি পুরসভা গঠনের পর এই সমস্ত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের এই প্রত্যাশাকেই ভোটে পুঁজি করছে রাজনীতির কারবারিরা। তৃণমূলের বিধায়ক রত্না ঘোষ বলেন, “বামেরা সেই অর্থে কাজ করেনি এখানে। আমরা পুরসভায় ক্ষমতায় এলে নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরাবো সবার আগে। অন্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতালের হাল ফেরানো হবে।”

Advertisement

উল্টোদিকে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বঙ্কিমবাবুর বক্তব্য, “আমি এই এলাকায় দশ বছরের বিধায়ক ছিলাম। সেই সময় কিছু পাকা রাস্তা করেছি। পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছি। এ বার শুধু বাড়ি-বাড়ি তা পৌঁছে দিতে হবে। ক্ষমতায় এলে সবার আগে ওই কাজটাই করব।”

সবাই ক্ষমতায় এলে কী করবে, তা জানাতে আগ্রহী। কিন্তু ক্ষমতার ভরকেন্দ্র কোন দিকে?

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে খুব কাছাকাছি রয়েছে তৃণমূল ও সিপিএম। বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত হরিণঘাটা বিধানসভায় তৃণমূল সিপিএমের চেয়ে ৮, ৪৪৫ ভোটে এগিয়ে রয়েছে। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর পেয়েছেন ৭০,৫৮৫টি ভোট। আর সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস পেয়েছেন ৬২,১৪০টি ভোট। অন্য দিকে, ৩৪,৭৩৪টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ দাস বিশ্বাস বা কে ডি বিশ্বাস। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী ইলা মণ্ডল। তিনি পেয়েছেন ৯,০৫৮টি ভোট। হরিণঘাট ১ পঞ্চায়েতে তৃণমূল সিপিএমের চেয়ে ১ হাজার ৩৮টি ভোটে এগিয়ে রয়েছে। তৃণমূল পেয়েছে ৭,৭৩২টি ভোট। সিপিএম পেয়েছে ৬,৬৯৪টি ভোট, বিজেপি ৪,১৭৬, কংগ্রেস ৬৪৮। শতকরা হিসাবে তৃণমূল পেয়েছে ৩৮.৮৬ ভাগ, সিপিএম পেয়েছে ৩৩.৬৫ ভাগ, বিজেপি পেয়েছে ২০.৯৯ ভাগ এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৩.২৫ ভাগ ভোট। হরিণঘাটা ২ পঞ্চায়েতে সিপিএম তৃণমূলের চেয়ে ৬১৬টি ভোটে এগিয়ে রয়েছে। সিপিএম পেয়েছে ৪,২৩২টি ভোট, তৃণমূল ৩,৬১৬ , বিজেপি ১, ৯০৭। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৫৫২টি ভোট। শতকরা হিসাবে সিপিএম পেয়েছে ৩৪.৫৬ ভাগ, তৃণমূল পেয়েছে ৩৩.৮০ ভাগ বিজেপি পেয়েছে ১৭.৮২ ভাগ এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৫.১৬ ভাগ।

তবে, এক সময় হরিণঘাটা বিধানসভা ছিল বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে প্রথম ধাক্কা খায় বামফ্রন্ট। হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতি তাদের হাতছাড়া হয়। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তারা আরও বড় ধাক্কা খায়। এই বিধানসভা আসন বামফ্রন্টের হাতছাড়া হয়। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী নীলিমা নাগ ১৩,০০৩ ভোটে সিপিএমের বিশ্বজিৎ পালকে পরাজিত করেন। নীলিমাদেবী পেয়েছিলেন ৮৩,৩৬৬টি ভোট এবং বিশ্বজিৎবাবু পেয়েছিলেন ৭০,৩৬৩টি ভোট। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হরিণঘাটা ১ নম্বরে ২৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১২টি, তৃণমূল ৯টি, কংগ্রেস ২টি এবং একটি আসনে জিতেছিল নির্দল। কিন্তু যেদিন বোর্ড গঠন হয়, সেদিন সিপিএমের লোকেরা উপস্থিত না থাকায় প্রধান ও উপপ্রধান হিসাবে মনোনীত হন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরা। হরিণঘাটা ২ পঞ্চায়েতে ১৩টি আসনের মধ্যে ১১টি তৃণমূল জিতে সরাসরি ক্ষমতা দখল করে।

হরিণঘাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক হেমন্ত ভৌমিক বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রহসন হয়েছিল। ১৯৭৮ সাল থেকে আমরা হরিণঘাটা ২ পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছি। এবার সেখানে ভোট করতে দেয়নি তৃণমূল। তাই আমরা সেখানে মাত্র দু’টি আসনে জিতেছি। হরিণঘাটা ১ পঞ্চায়েতে আমরা বেশি আসন পেলাম। কিন্তু, সেখানে আমাদের বোর্ড গড়তে দিল না তৃণমূল। আমাদের সদস্যদের বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখানো হয়েছিল। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি, মানুষ ভোট দিতে পারলে পুরবোর্ড আমাদের দখলে আসবে।” যদিও সিপিএম নেতার ওই দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল। দলের হরিণঘাটা ব্লকের সভাপতি দিলীপ রায় বলেন, “মানুষ আজ আর ওদের চায় না। আমরা হিসাব কষে দেখেছি ১৭টি মৌজার মধ্যে ৯টিতেই আমরা এগিয়ে রয়েছি।” সহজে ময়দান ছাড়তে রাজি নয় বিজেপিও। দলের হরিণঘাটা ব্লক সভাপতি কণক দেবনাথ বলেন, “১৭টি ওয়ার্ডেই আমরা প্রার্থী দেব। সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করব।”

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন