নিকাশির জলে থইথই ধুলিয়ান

ভরা শীতেও জলে ভাসছে বিস্তীর্ণ এলাকা। জলবন্দি প্রায় দু’ হাজার মানুষ। জমা জল সরাতে মাঝে মধ্যেই চলছে পুরসভার জেনারেটর। বছরের অধিকাংশ সময় এমনই জলছবি ধুলিয়ানের কিছু ওয়ার্ডে। বর্ষার জল নয় অবশ্য। আশপাশের ওয়ার্ডের নিকাশির জল। যত পাম্প দিয়ে বের করা হয়, ততই জমে যায় ফের। হাতের তালুর মতো চারদিক উঁচু সেই এলাকায় জমা জল বার করতে হিমশিম খান পুর-কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৬
Share:

এই ভাবেই জমে থাকে পচা জল। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

ভরা শীতেও জলে ভাসছে বিস্তীর্ণ এলাকা। জলবন্দি প্রায় দু’ হাজার মানুষ। জমা জল সরাতে মাঝে মধ্যেই চলছে পুরসভার জেনারেটর। বছরের অধিকাংশ সময় এমনই জলছবি ধুলিয়ানের কিছু ওয়ার্ডে। বর্ষার জল নয় অবশ্য। আশপাশের ওয়ার্ডের নিকাশির জল। যত পাম্প দিয়ে বের করা হয়, ততই জমে যায় ফের। হাতের তালুর মতো চারদিক উঁচু সেই এলাকায় জমা জল বার করতে হিমশিম খান পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারের আশ্বাস, ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকার সেই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা-আশঙ্কায় রয়েছে ধুলিয়ান।

Advertisement

বর্ষা পেরিয়ে শরৎ-হেমন্ত শেষে শীত পড়ে গিয়েছে। এখনও জলে থই থই ধুলিয়ান শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিজলতলা। নিচু জায়গায় জমির দাম কম বলে তুলনায় দরিদ্র পরিবারেরই বসতি এখানে। জমা জলে দুর্ভোগের শেষ নেই তাঁদের। সামনে-পিছনে দু’দিকেই জলবন্দি মানোয়ারা বিবির পরিবার। মানোয়ারা বিবির কথায়, “খাবার জলটুকুও পেতে হলে জল ভেঙে যেতে হয়। বর্ষায় জলে ভাসলে তবু বলার থাকে। কিন্তু শীতকালেও এ অবস্থা মানা যায় না।” এলাকাবাসীর অভিযোগ, জল সরাতে একটা পাম্প বসিয়ে রাখা হয়েছে বটে। তবে তা সপ্তাহে দু’দিনও ঠিকমতো চলে না। ফলে জল সরবে কী, নিত্য জলের উচ্চতা বাড়ছে উঠোনে। পুরসভার পাম্প চালক জামির শেখ মেনে নেন সেই অভিযোগ। তাঁর কথায়, “নিয়মিত পাম্প চালালে জমা জল হয়তো অনেকটাই কমানো যেত। কিন্তু পুরসভা তেল না দিলে পাম্পটা চলবে কিসে।”

তবে, পাম্প চালিয়ে নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানও সম্ভব নয়। বিশেষ করে সমস্যা যেখানে এতটাই ব্যাপক। শীতকাল বলে তবু জলে ভাসছে শুধুমাত্র হিজলতলা। বর্ষার আগে-পরে এলে এমন জলছবি দেখা যায় আশপাশের ৯টি ওয়ার্ডে। সে যেন এক নদী। যাতে জলবন্দি প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কাওসার আলি জানান, নিকাশির জল সবচেয়ে বেশি জমে ১১ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর কথায়, “আমার নিজের ওয়ার্ডের দু’হাজার মানুষ এই শীতেও জলে ভাসছে। জল সরাতে পাম্প চালাতে হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জলটা ফেলব কোথায়? গোটা শহরের জল নিকাশ হচ্ছে এই দুই ওয়ার্ডের উপর দিয়েই। যেটুকু নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেও প্লাস্টিক থেকে বিড়ির পাতা ফেলা, শৌচকার্য—সবই চলছে।”

Advertisement

আগে ধুলিয়ান শহরে নিকাশির জমা জল গরুর হাট ও হিজলতলার মাঠ বেয়ে সুলিতলার কালভার্ট দিয়ে ডাকবাংলো হয়ে গিয়ে পড়ত ফিডার ক্যানেলে। এখন ওই নিকাশি পথ অবরুদ্ধ। চারিদিকে ইচ্ছে মতো গড়ে উঠেছে ঘনবসতি। বছর কয়েক আগে ওই এলাকায় পাইপলাইন বসিয়ে নর্দমার জলকে শ্মশানের কাছে একটি চৌবাচ্চায় ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চৌবাচ্চার জল পাম্প বসিয়ে ফেলা হচ্ছিল গঙ্গায়। নজরদারির অভাবে ধীরে-ধীরে সেই চৌবাচ্চা প্লাস্টিক আর জঞ্জালে ভরে উঠেছে। অবরুদ্ধ পাইপ দিয়ে জল বেরোতে পারে না আর।

উপপুরপ্রধান দিলীপ সরকারের মতে, “জলে ডোবা জমি সস্তায় কিনে অনুমতি ছাড়াই যেখানে-সেখানে গজিয়ে উঠেছে ঘর বাড়ি। নিকাশি ব্যবস্থা বিপন্ন হওয়ার কারণ সেটাই।” তবে নিকাশি সমস্যা সমাধানের একটা চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুরসভার অবর সহকারী বাস্তুকার কেমিন রেজা জানান, ধুলিয়ানে ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পুর-কারিগরি দফতর ও ‘সুডা’ দু’দফা সমীক্ষা করেছে। তাদের পরিকল্পনা মতো সবিস্তার রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। সেই পরিকল্পনা রূপায়ণে কম করে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো কোটি টাকার প্রয়োজন। তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত পুরবোর্ডের কর্তারা বলছেন, একবার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে টাকা পেতে খুব একটা সমস্যা হবে না। না আঁচাইলে সেই আশ্বাসে ভরসা নেই পুরবাসীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন