সীমান্তে জমছে ঈদের বাজার

এই সময় ঘর তাঁদের অপেক্ষায় থাকে। অপেক্ষায় থাকেন ঘরণী। বিদেশ, বিভুঁইয়ে থাকা মানুষগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকে সীমান্তের বাজারও। ঈদের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। সীমান্তবর্তী চাপড়া, তেহট্ট, করিমপুর কিংবা ডোমকলের মতো বাজারে ঈদের কেনাকেটাও শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০১:০৭
Share:

ঈদের পসরায় রঙের মেলা। বহরমপুরে ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।

এই সময় ঘর তাঁদের অপেক্ষায় থাকে। অপেক্ষায় থাকেন ঘরণী। বিদেশ, বিভুঁইয়ে থাকা মানুষগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকে সীমান্তের বাজারও।

Advertisement

ঈদের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। সীমান্তবর্তী চাপড়া, তেহট্ট, করিমপুর কিংবা ডোমকলের মতো বাজারে ঈদের কেনাকেটাও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছেন তাঁদের জন্য যাঁদের সৌজন্যে শেষ মুহূর্তে জমে উঠবে ঈদের বাজার। সীমান্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই দেখা যায় ঈদের বাজার প্রথমে শুরু হয় ঢিমেতালে। তারপর শেষের দিকেই হঠাৎ করে বাজার উঠতে শুরু করে। কারণ সেই সময়েই ভিন্ রাজ্য কিংবা ভিন্ দেশে কাজে যাওয়া লোকজন ঘরে ফেরেন। করিমপুরের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী বিমান মণ্ডল বলছেন, “বৃষ্টির কারণে একটু অসুবিধা হচ্ছে ক্রেতা বিক্রেতা সকলেরই। তবে তার জন্য যে বাজার খারাপ যাচ্ছে এমনটা বলা যাবে না। তাছাড়া বাজার তো সবে শুরু হল। বাজার যাঁদের অপেক্ষায় থাকে তাঁরা সকলে তো এখনও ঘরে ফেরেননি। তাঁরা ফিরলেই বাজার আরও চাঙ্গা হবে।”

ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে জিনিসপত্রও মজুত করা শুরু করেছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছরই ঈদের আগে বিশেষ কিছু পোশাক কিংবা জুতোর নাম মুখে মুখে ঘোরে। বছর কয়েক আগে সীমান্তের বাজারগুলোতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল আনারকলি কিংবা ঝিলিক চুড়িদার। শাড়ি বললেই বাহা। আর করিমপুর ও ডোমকলের বাজারগুলিতে হইহই করে একসময় বিক্রি হয়েছে মিসড কল চপ্পল। এবার যেমন চাহিদা রয়েছে পাখি চুড়িদার ও লেহেঙ্গা চোলির। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে ভাল বিকোচ্ছে ন্যারো জিন্স, টি শার্ট। বস্ত্র ব্যবসায়ী রতন অগ্রবাল বলেন, “গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি ব্র্যান্ডের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। সেই মতো ঈদ কিংবা পুজোর আগে আমরা মূলত ব্র্যান্ডের পোশাকেই বেশি জোর দিচ্ছি।” করিমপুরের এক জুতো ব্যবসায়ী বলছেন, “ঈদের বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে মূল বাজার লাগবে আরও দিন সাতেক পরে থেকে। বাইরে থাকা লোকজন তো সবে ফিরতে শুরু করেছে।”

Advertisement

নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ সভাপতি বিধান দত্ত জানান, সীমান্তবর্তী এলাকার বহু মানুষ কর্মসূত্রে ভিন রাজ্য তো বটেই, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবেও কাজ করেন। উৎসবের মুখে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। আর কেনাকেটাও করেন স্থানীয় বাজারগুলো থেকেই। ফলে স্থানীয় বাজারগুলোও ওই বাইরে থাকা লোকজনের উপর অনেকটাই নির্ভর করে।

ইতিমধ্যে কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছেন হোগলবেড়িয়ার জামারুল মণ্ডল ও বাবর আলি শেখ। তাঁদের কথায়, “পরবের সময় বাড়িতে না থাকলে হয় না কি? এই সময়টার জন্য আমরা সকলেই অপেক্ষা করি। এরমধ্যে একটা ঝকঝকে দিন দেখে সপরিবারে বেরিয়ে পড়ব বাজার করতে।” ডোমকলের মোশারফ হোসেন এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। তবে স্ত্রীকে তিনি বলে রেখেছেন যা যা কিনতে হবে তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখতে। গত বছর ঈদে বাড়ি ফিরতে পারেননি ডোমকলের সারোয়ার জাহান। এবার তিনি ফিরছেন। স্ত্রী জাহানারা বিবি বলছেন, “গত বছর মেয়েটা মনখারাপ করে বসে ছিল। এবার আব্বার সঙ্গে বাজারে যাবে বলে খুব খুশি।”

আন্তারুল মণ্ডল, ইয়াকুব শেখেরা পরিবারের সবার জন্য বাজার করে ফেরার পথে বলছিলেন, “জানেন, বাড়ি গেলেই সবাই হইহই করবে, ‘এত টাকা খরচ করার কী ছিল!’ কিন্তু এতদিন বাদে বাড়ি ফিরে সবাইকে খুশি করতে গিয়ে অত লাভ-লোকসান নিয়ে ভাবলে চলে!” আর এ ভাবেই অপেক্ষার শেষ হয়। জমে ওঠে খুশির পরব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন