ছবি: সংগৃহীত।
ধৃত দুই বাংলাদেশি জঙ্গি-সহ তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র দুই আধিকারিক বৃহস্পতিবার দুপুরে লালবাজারে আসেন। এ দিন তাঁরা প্রায় চার ঘণ্টা লালবাজারে ছিলেন। এ ছাড়াও এ দিন লালবাজারে আসেন হায়দরাবাদ পুলিশের সন্ত্রাস দমন বিভাগ (এটিএস)-এর দুই অফিসার এবং বিএসএফ-এর এক কর্তা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে তিন সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে লালবাজারে এসটিএফ-এর অফিসারেরা দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন। পরে তাঁরা দুই বাংলাদেশি-সহ তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা স্টেশন থেকে গ্রেফতারের সময় ধৃতদের থেকে বোমা তৈরির সার্কিট মিলেছিল। লালবাজার সূত্রের খবর, গোয়েন্দাদের সামনেই দুই বাংলাদেশি জঙ্গি বোমা তৈরি করে দেখায়। বোমা তৈরির পর কী ভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে হয়, তা-ও দেখায় ধৃতরা। ভারতে এসে প্রথমে হায়দরাবাদের মানেগুড়ায় কসাইখানায় কাজ করে ধৃতেরা। পরে কর্নাটকের বেলগাঁও ও পুণে ঘুরে ফের হায়দরাবাদ ফিরে যায় তারা। এ দিন হায়দরাবাদ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখার দুই কর্তা লালবাজারে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
ধৃত দুই বাংলাদেশি সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবির, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন এবং বসিরহাটের বাসিন্দা মনোতোষ দে এখন লালবাজারের এসটিএফ-এর লক আপে রয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, আনসারুল্লা বাংলা টিমের মূল মাথা সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবিরকে নিয়েই মাথাব্যথা গোয়েন্দাদের। তনবির পুলিশি জেরায় অনেক তথ্যই গোপন করছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এক গোয়েন্দার কথায়, ‘‘তনবির পুলিশি জেরায় খুবই মেপে কথা বলছে। আমরা কোনও কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তবেই ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলছে।’’ গোয়েন্দারা জানান, কর্নাটকের বেলগাঁওয়ে থাকার সময় দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করিয়েছিল তনবির। ধৃতদের থেকে মোট ছ’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে।
এ দিকে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠ মনোতোষ দে ওরফে জিয়ারুল গাজিকে গ্রেফতারের পর থেকেই তার সম্পর্কে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। জেরায় মনতোষ জানিয়েছে, বসিরহাটে দুই স্ত্রী ছাড়াও ইছাপুরের লেনিনগড়ে তার একটি বাড়ি আছে। এখানেও তার এক স্ত্রী আছে। অশোকনগরে অস্ত্র আইনের মামলায় ১১ মাস জেলও খেটেছিল মনোতোষ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মনোতোষের বাবা প্রয়াত মনোরঞ্জন দে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির কর্মী। এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা জানান, অস্ত্র কারবারি মনোতোষের সঙ্গে ইছাপুর রাইফেল কারখানার কোনও যোগ ছিল কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানান, গত ছ’মাসে একাধিক বার সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার করেছে মনোতোষ। কখনও গরু পাচারকারীদের মাধ্যমে, কখনও ভিন্ন পথে।
লালবাজারে এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা জানান, মনোতোষের তিনটি বিয়ে। লেনিনগড়ের পরিবারের সঙ্গে অবশ্য ১৫ বছর যোগাযোগ নেই মনতোষের। সে বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী দে। আয়ার কাজ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন। লক্ষ্মীদেবীর কথায়, ‘‘টিভি দেখে জানলাম ও দুই স্ত্রী’র সঙ্গে বসিরহাটে থাকে। বেঁচে আছে কি না তা’ও জানতাম না এত বছর। আমরা বেশি দিন ঘর করিনি। মাঝে মাঝেই বাংলাদেশে চলে যেত। শেষ বার সেই যে গেল আর ফিরে এল না।’’
লক্ষ্মীদেবীর প্রতিবেশী সন্ধ্যা সরকার, অসীম শীলেরাও বলেন, ‘‘লোকটার মুখটাই ভুলে গিয়েছিলাম। টিভি দেখে লক্ষ্মীকে জানাতে ও দেখে চমকে উঠল।’’