Kali Puja

মোমের আলোয় হোক কালীপুজো, দীপাবলি

বর্তমান পরিস্থিতিতে সব রকম শব্দবাজি বা আলোর বাজি ব্যবহারের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় (সভাপতি, চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমি)

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ০৬:০৯
Share:

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লিতে সব রকম বাজির বিকিকিনি বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত বছর থেকে। ১৯৯৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর ২৩ বছর অতিক্রান্ত। কালীপুজো বা দীপাবলির শব্দ-দৈত্যকে বোতলবন্দি করার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশের সক্রিয়তা শুরুতে সত্যিই অভিনন্দনযোগ্য ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, কয়েক বছর ধরে এই সক্রিয়তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

এ রাজ্যে শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ‘শহিদ’ হয়েছেন অন্তত ১২ জন। বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধের জন্য ২০১৫ সালে পরিবেশ অ্যাকাডেমির মামলা রুজু করেছিল গ্রিন ট্রাইবুনালে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ রাজ্যে সব রকম বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করার নির্দেশ জারি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা কার্যকর হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বেআইনি বাজি কারখানাগুলিতে বিস্ফোরণের ফলে কমপক্ষে ৭০ জন মারা গিয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ভারতে কেবলমাত্র শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নয়। কারণ, আলোর বাজিও ব্যাপক ভাবে বায়ুদূষণ করে এবং তার জেরে সংক্রমিতদের মৃত্যুকে প্রায় অনিবার্য করে তোলে। মনে রাখা প্রয়োজন, করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ ‘সেবা শহিদ’ হয়েছেন। ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-পুলিশকর্মী-প্রশাসনিক আধিকারিক— যাঁরা করোনা-যুদ্ধে প্রথম সারির সৈনিক, তাঁদের অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। দিল্লির মতোই এ বার পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের সর্বত্রই কালীপুজো ও দীপাবলি উৎসব পালিত হোক মোমের আলোয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব রকম শব্দবাজি বা আলোর বাজি ব্যবহারের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

মানুষ সুস্থ ভাবে বাঁচলে তবেই উৎসব। কিন্তু সামাজিক উৎসব যদি জাতীয় জীবনে সঙ্কট সৃষ্টি করে, তা হলে তা নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্তরে বিশেষ কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যদিও অভিনন্দনযোগ্য সদর্থক ভূমিকা পালন করতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এমন একটা সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকতে পারে না নাগরিক সমাজও। শ্রদ্ধেয় চিকিৎসকেরা বারবার রাষ্ট্রের কাছে দরবার করে চলেছেন। যাতে এই করোনা অতিমারির সময় সব রকম বাজি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। পরিবেশ সুরক্ষা আইন (১৯৮৬) এবং ‘ডিজাস্টার ম্যনেজমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী রাষ্ট্রের হাতে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা রয়েছে বাজিকে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করার। কেন্দ্র এবং সমস্ত রাজ্যগুলির এই ব্যাপারে তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

রাষ্ট্রের উচিত, মানুষের মঙ্গলার্থে ওই দাবি মেনে নেওয়া। আমরা কি কেউ কখনও ভুলতে পারব, সে দিন এই শব্দবাজির তাণ্ডবেই দিল্লির সেই লাঞ্ছিতার আর্ত চিৎকার কেউ শুনতে পাননি। দুষ্কৃতীদের হাতে লাঞ্ছিতা সেই মহিলা পরের দিনই আত্মহত্যা করেছিলেন। আমরা ভুলতে পারি না, আমাদের বাড়িরই কাওর বাবা, কারও মা, স্বামী বা বোন করোনা-যুদ্ধে ‘শহিদ’ হয়েছেন। আসুন কালীপুজো এবং দীপাবলির রাতে মোমবাতির আলোয় ‘শব্দ-শহিদ’ এবং ‘সেবা-শহিদ’দের স্মরণে অন্তত এক মিনিট নীরবতা পালন করি। সর্বতো ভাবে বাজির বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদের শপথ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন