child

Child: মালদহে ঘুমন্ত শিশুকে আছাড় জেঠিমার, মায়ের ‘গোয়েন্দা’ বুদ্ধিতে খুনের ছক ক্যামেরাবন্দি

গত মঙ্গলবার পুরাতন মালদহ থানার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের রানিরগড়় এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। শিশুটি একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২২ ১৭:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি

ফাঁকা ঘরে বিছানায় ঘুমিয়েই ছিল শিশুটি। আচমকা ওই ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত একরত্তিকে তুলে মেঝেতে আছাড় মারেন এক মহিলা। আর্ত চিৎকার করে যাচ্ছে শিশুটি। তার পরেও নিস্পৃহ ওই মহিলা। তাঁর চোখেমুখে নির্লিপ্ততা। তিনি আরও বার দুয়েক শিশুটিকে মেঝেতে আছাড় মারেন। তার পর আবার তাকে বিছানায় আগের অবস্থায় শুয়ে দিয়ে চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যান। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো এই দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়াল পুরাতন মালদহ থানার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের রানিরগড়় এলাকায়।

Advertisement

স্থানীয়দের দাবি, গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে। শিশুটিকে আপাতত একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রকাশ্যে আসা ওই ভিডিয়োয় শিশুটিকে তুলে আছাড় মারতে দেখা গিয়েছে যে মহিলাকে, তিনি সম্পর্কে ওই শিশুর জেঠিমা বলে প্রতিবেশীদের দাবি। যিনি যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের স্ত্রী। বুধবারের মধ্যে গোটা ঘটনা গ্রামে চাউর হতেই সালিশি সভা ডেকে অভিযুক্ত মহিলাকে গ্রামছাড়া করার নিদান দেওয়া হয়। যদিও এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি থানায়। লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অপর্ণা বিশ্বাস মাঝেমধ্যেই দেখতেন তাঁর বছর দুয়েকের ছেলের কখনও নাক দিয়ে, আবার কখনও দাঁত দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঘুম থেকে উঠে ভীষণ কান্নাকাটি করত তাঁর ছেলে। কেন এমন ঘটছে, মা হয়েও বুঝতে পারতেন না তিনি। স্থানীয় চিকিৎসককেও দেখানো হয়। চিকিৎসকদের অনুমান ছিল, হয়তো পড়ে গিয়ে শিশুর নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। এর পর নানা কারণে বড় জা শিবানী বিশ্বাসের উপর সন্দেহ হয় অপর্ণার। ‘সত্যান্বেষণ’ করতে গিয়ে শিশুর শোওয়ার ঘরে ক্যামেরা চালু করে একটি ফোন লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ওই ক্যামেরাতেই ধরা পড়ে হাড়হিম করা ওই দৃশ্য।

Advertisement

আক্রান্ত শিশুর ঠাকুমা ঊষারানি বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার নাতি মাঝেমধ্যেই ফাঁকা ঘরে চিৎকার করে কেঁদে উঠত। নাতির কান্নার কারণ কিছুতেই বুঝতে পারতাম না। ছুটে ঘরে গিয়ে দেখতাম, ছোট্ট নাতির নাকে-মুখে রক্ত লেগে আছে। অপর্ণার মোবাইলে ওই ভিডিয়ো দেখার পর এখন সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। একটা ছোট্ট বাচ্চাকে এই ভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ আছাড় মারতে পারে, এটা ভাবলেই সারা শরীর শিউরে উঠছে! মানুষ এতটা নৃশংস হতে পারে!’’ ঠাকুমাই জানান, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর শিবানীর বিরুদ্ধে শিশুকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ তুলে বুধবার গ্রামে সালিশি সভা ডাকা হয়। সকলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শিবানীকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হোক।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শিবানীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই ছেলের এক জনের বয়স আট বছর, আর এক জনের ছ’বছর। মেয়ের বয়স পাঁচ বছর। তিন সন্তানের মা শিবানী এই উন্মত্ততার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত স্বামী তথা প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য অচিন্ত্য বিশ্বাসও। যদিও এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি তিনি। পড়শিদের দাবি, অপর্ণার ছেলেকে নিয়ে হিংসা করতেন শিবানী। ঠাকুমা তাঁর তিন সন্তানের চেয়ে ছোট বউ অর্পণার ছেলেকে বেশি ভালবাসেন, এই ধারণা থেকেই হয়তো খুনের চেষ্টা করেছেন। আর পারিবারিক সমস্যাও থেকে থাকতে পারে।

এই গোটা ঘটনা নিয়ে পুরাতন মালদহ থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি ওই শিশুর পরিবার। পুলিশ আধিকারিকদের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করানো হলে জানানো হয়েছে, অভিযোগ জমা পড়লে দোষীর কঠোর শান্তির ব্যবস্থা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন