সচেতনতায়: রক্তদান শিবিরে শর্মিষ্ঠা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
এ যেন সমাজকে সচেতন করে তোলারই প্রচেষ্টা! বিয়েতে রক্তদান থেকে গাছের চারা বিতরণ, শব্দদূষণ রোধ থেকে জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত নানা রকম বার্তা দিয়ে নজির গড়লেন বুনিয়াদপুর শহর সংলগ্ন শ্যামপুর গ্রামের নবদম্পতি।
তথাকথিত রীতির বাইরে গিয়ে বৌভাতের দিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন পেশায় সরকারি কর্মী অর্জুন মণ্ডল ও স্ত্রী শর্মিষ্ঠা সরকার। শুধু তাই নয়, নিমন্ত্রিত প্রত্যেক আত্মীয় ও বন্ধুদের গাছ উপহারের মাধ্যমে দিয়ে ‘সবুজ পৃথিবী’ গড়ার বার্তাও দিলেন তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার শ্যামপুরের বাসিন্দা অর্জুনের সঙ্গে বিয়ে হয় বুনিয়াদপুর কলেজ মোড়ের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠার। জানালেন, বিয়ের আগেই ঠিক করেছিলেন, চিরাচরিত রীতির বাইরে গিয়ে সমাজসেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে তাঁরা নতুন জীবন শুরু করবেন তাঁরা। তাই বিয়ের নিমন্ত্রণের কার্ডে ছাপা হয়েছিল আপৎকালীন বিভিন্ন পরিষেবার নম্বর। চাইল্ড হেল্প লাইন, ওমেন হেল্প লাইনের মতো একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বর ছিল কার্ডে। সবুজায়নের বার্তা, রক্তদানের প্রয়োজনীয়তার কথাও ছিল তাতে। সেই কার্ড এখন ‘ভাইরাল’।
রবিবার, তাঁদের বৌভাতের দিন দুপুরে রক্তদানের আয়োজন করা হয়েছিল। আত্মীয়, বন্ধু ও পরিবারের সদস্য মিলে ১৫ জন রক্তদান করেন। প্রীতিভোজ শেষে প্রত্যেক নিমন্ত্রিত অতিথিদের হাতে উপহার হিসাবে দেওয়া হয় চারাগাছ। সেই গাছ বলা হয় বিশ্ব উষ্ণায়ণ রোখার কথাও।
কেন হঠাৎ বিয়েতে এই ছকভাঙা পদক্ষেপ? অর্জুন-শর্মিষ্ঠার কথায়, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আজও রক্তদানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি। অনেকেই জানেন না প্রশাসনের জরুরি পরিষেবার কথাও। সেই বিষয়গুলি সমাজে ছড়িয়ে দিতে বিয়েকেই মাধ্যম করেছি। বিয়েতে প্রচুর মানুষ আসেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। এখানে কোনও বার্তা দিলে তা সহজেই সকলের মধ্য়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। দুই পরিবারও আমাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ছে।
তবে, শুধু রক্তদান জীবন দান, গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান-এর মতো বার্তাই শেষ নয়, বিয়েতে দেওয়া হয়েছে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের বার্তাও। বিয়ে উপলক্ষে ডিজে বা উচ্চগ্রামের শব্দ বাজানোর পরিবর্তে লোকশিল্পীদের দিয়ে লোকগান পরিবেশন করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের নজির গড়েছেন তাঁরা।
জেলার রক্তদান আন্দোলনের কর্মী দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘‘এমন বিয়ে সত্যিই সমাজ সচেতনতার নজির তৈরি করল।’’