কালিম্পং নতুন জেলা হওয়ার পরে প্রশাসনিক বৈঠকে ডেকে নেওয়া হল পাহাড়ের বোর্ডগুলোর সদস্যদের। এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ প্রতিটি সম্প্রদায়ের বোর্ড দশটি করে ক্লাবের নাম বেছে দেবে। সেই ক্লাবগুলিকে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার টাউন হলে ডেকে অনুদান দেবে রাজ্য সরকার। প্রতিটি বোর্ড জমিও পাচ্ছে। সেই জমিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ নিজেদের সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের তৈরি হাতের কাজ এবং নানা ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী বিক্রি করবে। বিপণন কেন্দ্রগুলি পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ কাড়বে বলে মুখ্যমন্ত্রীর আশা।
ক্লাবের মতো পাহাড়ের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও এ বার থেকে রাজ্যের প্রকল্পের সুবিধে পাবে বোর্ডের মাধ্যমেই। এ দিন আরও দু’টি নতুন বোর্ডেরও ঘোষণা হয়েছে। তরাই-ডুয়ার্সের জন্য আদিবাসী এবং গোর্খাদের টাস্ক ফোর্স ছিল। সেই টাস্ক ফোর্স ভেঙে দু’টি পৃথক বোর্ড গড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনই সরকারি ভাবে সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
পর্যটকদের আকর্ষণ করতে দার্জিলিঙের ম্যালের মতো কালিম্পঙেও একটি ভিউ পয়েন্ট তৈরি হবে। সে জন্য একটি জায়গাও চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। সেখানে একটি পুরনো জেল রয়েছে। সেটি অন্যত্র সরানো হবে। গত মঙ্গলবার কালিম্পঙকে পৃথক জেলা ঘোষণার উচ্ছ্বাস এ দিনও চলেছে। সকালে আবির খেলা-বিকেলে আতস বাজি পুড়েছে পাহাড়ি শহরের অনেক জায়গায়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রকাশ্য সভা না থাকলেও দুপুরে তিনি প্রশাসনিক বৈঠকে একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন।
বোর্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে প্রশাসনিক বার্তা দেওয়া হল বলে দাবি করেছেন সরকারি আধিকারিকদের একাংশ। শুধুমাত্র দাবি মতো বোর্ড গড়ে দেওয়া হল-বরাদ্দ হল এমন নয়। বোর্ডগুলি কী কাজ করেছে, কতটা করেছে সবই যাচাই করা হবে। নতুন জেলার অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে বারেবারেই পর্যটনের উপর জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটন প্রকল্পের কাজেও বোর্ডগুলিকে সামিল করার নির্দেশও এ দিন দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাড়ার ক্লাব থেকে পর্যটন পাহাড়ের সবতেই জড়িয়ে বোর্ডগুলিকে সামিল করছে রাজ্য সরকার।
এ দিন বিভিন্ন দল থেকে ৫ হাজার কর্মী-সমর্থককে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী তথা পাহাড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। সভায় বক্তৃতায় পাহাড়ের বাসিন্দাদের কাছে কাজ করার সুযোগ চেয়েছেন অরূপবাবু। এ বছরেই পাহাড়ে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। অরূপবাবু বলেন, ‘‘ভোট আসছে। আমাদের কাজ করার সুযোগ দিন।’’
আরও পড়ুন:
বছর দেড়েক আগে পাহাড়ে সংগঠনের দেখভালের দায়িত্ব অরূপবাবুকে দিয়েছিলেন দলনেত্রী। তারপর থেকে প্রতিবারই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাহাড় সফরে এসেছেন অরূপবাবু। মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ প্রদীপ প্রধানকে গত বছর দলে যোগদান করান অরূপবাবু। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির বোন পারু গিরিও এখন তৃণমূলে। অরূপবাবুর নেতৃত্বে দলে যোগ দেওয়ার পরে পারু এখন তৃণমূলের সহ সভাপতি। মোর্চা নেতাদের ওপরে ‘স্নায়ুর চাপ’ বাড়াতেই বারবার তাদের ঘর ভাঙানো অরূপবাবুকে দিয়েই তৃণমূলনেত্রী পাহাড়ে ভোটের প্রচার শুরু করালেন বলে দলের নেতাদের একাংশের দাবি।
অরূপবাবু এ দিন বার বার মোর্চা নেতাদের আক্রমণ করেছেন। প্রদীপ প্রধান সহ পাহাড়ের সংগঠনের অন্য নেতা-নেত্রীরাও বক্তব্য রেখেছেন। প্রদীপ প্রধান বলেন, ‘‘পাহাড়ে অপরিসীম জলকষ্ট চলছেই। কিন্তু মোর্চা নেতারা জিটিএতে থেকে কী করেছেন। সব কাজের হিসেব দিতে হবে। উন্নয়ন মানে শুধু নিজেদের ব্যক্তি লাভ নয়। পাহাড়ের বাসিন্দারা ভোটে উত্তর দেবেন।’’ বক্তব্য রাখেন পারুও। মোর্চার দাবি, অভিযোগ ভিত্তিহীন।
বিধানসভার অধিবেশন চলা সত্ত্বেও কেন পাহাড়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পংকে আলাদা জেলা ঘোষণা করলেন, তার জন্য বিধানসভায় এ দিন তাঁর বিবৃতি দাবি করলেন শিলিগুড়ির সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও মন্তব্য করেছেন, ‘‘এটা তৃণমূলের রাজনৈতিক ভিত্তি প্রসারিত করারই অঙ্গ।’’ তৃণমূল জানিয়েছে, নতুন জেলার বিবৃতি আগেই দেওয়া হয়েছিল।