উত্তরের কড়চা

তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পেরোল গত এপ্রিলে৷ মঞ্চ ও গ্রন্থে তিনি, খালেদ চৌধুরী ছিলেন এক অনন্য স্থপতি৷ ‘স্থপতি’ কথাটাই ব্যবহার করা ভাল, কারণ মঞ্চ যেমন, গ্রন্থও তো তেমনই এক নির্মাণ৷ দীর্ঘ ষাট বছর ধরে বাংলা ও হিন্দি বা অন্য ভাষার নাটকেও তাঁর মঞ্চস্থাপত্য আজও রয়ে গিয়েছে দৃষ্টি-স্মৃতিতে৷

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০১:১৪
Share:

খালেদের জীবন

Advertisement

বাড়ি থেকে পালিয়ে

তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পেরোল গত এপ্রিলে৷ মঞ্চ ও গ্রন্থে তিনি, খালেদ চৌধুরী ছিলেন এক অনন্য স্থপতি৷ ‘স্থপতি’ কথাটাই ব্যবহার করা ভাল, কারণ মঞ্চ যেমন, গ্রন্থও তো তেমনই এক নির্মাণ৷ দীর্ঘ ষাট বছর ধরে বাংলা ও হিন্দি বা অন্য ভাষার নাটকেও তাঁর মঞ্চস্থাপত্য আজও রয়ে গিয়েছে দৃষ্টি-স্মৃতিতে৷

Advertisement

খালেদ চৌধুরীর জন্ম ২০ ডিসেম্বর, ১৯১৯, ব্রিটিশ ভারতের শ্রীহট্ট জেলায়, এখন যা বাংলাদেশে৷ শ্রীহট্ট বা সিলেট, সেই সিলেট, সৈয়দ মুজতবা আলী, নির্মলেন্দু চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস বা গুরুসদয় দত্তের জন্মভূমি৷ জন্মসূত্রে খালেদ চৌধুরীর নাম ছিল চিররঞ্জন। পিতা চন্দ্রনাথ দত্তচৌধুরীর দেওয়া এ নাম বদলে গেল ১৯৪৩-এ৷ সতেরো বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে খালেদ চলে যান কলকাতায়৷ ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতেন৷ পঞ্চাশের মন্বন্তর যখন, খালেদ তখন কিশোর, তখনই ছবি আঁকতেন দুর্ভিক্ষের৷ কমিউনিস্ট পার্টিতেও তাঁর প্রথম দিকের কাজ ছিল পোস্টার আঁকা৷ পরে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের উৎসাহে যোগ দিলেন গণসঙ্গীতে৷ তবে ছবি আঁকাই ছিল তাঁর প্রথম প্রেম৷ কলকাতায় গিয়ে শিল্পমহলে ঘনিষ্ঠ হলেন৷ জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন, আমিনা-র মতো শিল্পী তখন তৈরি উঠছিলেন কলকাতায়৷ মোটামুটি ভাবে মোট ১০৬টি নাটকে মঞ্চস্থাপত্য ও সজ্জা করেছেন খালেদ৷ কিন্তু তাঁর স্বল্পপরিচিত একটি পরিচয় গ্রন্থশিল্পী হিসেবে৷ বহু বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করেছেন তিনি৷ তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত মঞ্চস্থাপত্যের যে কাজ সেই 'রক্তকরবী'র ভাবনার পিছনেও রয়েছে বইয়ের অলঙ্করণ৷ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রবাসী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটকটির অলঙ্করণে জালের আড়ালে রাজা আঁকলেন। তা ছাড়া সাতখানি ছবি আঁকা হয়েছিল। নাটকের মঞ্চে তারই প্রভাব দেখা গেল৷

এই সৃষ্টিশীল মানুষটির নানা কাজের আলোচনা এতকাল হয়েছে, কিন্তু তাঁর প্রামাণ্য জীবনী লেখা হয়নি৷ এ বার সেই কাজ হল৷ প্রদীপ দত্তের লেখা খালেদ চৌধুরীর ‘প্রামাণ্য জীবনী’ লোকায়ত থেকে রূপায়ত প্রকাশিত হল কৃষ্ণনগরের ধ্রুবপদ প্রকাশনী থেকে৷ সে বইয়ে নানা স্মৃতি৷ যেমন পিতার অত্যাচারে ঘর ছেড়ে মুসলমান পরিবারে আশ্রয় নিয়ে স্বরচিত ‘খালেদ’ নামে পরিচিত হন চিররঞ্জন। শাঁওলি মিত্রের স্মৃতিতে ধরা আছে, তাঁদের বাড়ির কচি আমপাতা দিয়ে কেমন বাঁশি বানিয়ে বাজাতেন খালেদ৷ সঙ্গের ছবিতে প্রবীণ ও তরুণ খালেদ চৌধুরী।

ডুয়ার্সের ঘরদোর

মাস্টারমশাইয়ের সুপারিশে উত্তরবঙ্গের ধনী রায়চৌধুরী বাড়িতে গৃহশিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছে সদ্য আর্ট কলেজের স্নাতক ঋত্বিক। আর সেই সূত্রেই বাড়ির অন্দরমহলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে থাকা তার। সেখান থেকেই খানিকটা যেন গার্হস্থ্য রহস্যের জাল বুনতে শুরু করেন বাণী বসু, তাঁর সদ্যপ্রকাশিত উপন্যাস চালসার ডায়েরি-তে। রায়চৌধুরী বাড়ির ‘ছোট মা’ গুণময়ী আর হর্ষদেবের জটিল দাম্পত্য সম্পর্ক, রানা, ভুটু, টুনি, ঝিল আর মিলের নিঃসঙ্গ জীবনে খানিকটা হলেও খোলা হাওয়া আনে ঋত্বিক। তবে হর্ষদেবকে সে খুঁজে পেতে চায় তার আঁকা পোট্রেটের মধ্যে। সেই পোট্রেট আঁকতেই গিয়েই ঋত্বিক আবিষ্কার করে তার নতুন জন্ম পরিচয়। উপন্যাসটিকে ‘ঋত্বিকের ডায়েরি’ও বলা যায় যেন। তার চোখ দিয়েই চালসা-চাপড়ামারির প্রকৃতিকে যেন খুঁজে পেতে চান লেখিকা। আর সেই সঙ্গে জড়িয়ে যায় শিল্পের প্রতি এক অদ্ভূত মায়াডোর।

বৈশাখেই পৌষমাস

একেই বলে, কারও সর্বনাশ তো কারও পৌষমাস! আকাশে কালো মেঘ দেখে ঝড়ের আশঙ্কায় যখন আমচাষিদের উদ্বেগের পারদ চড়তে থাকে, তখন ফুলবানুরা প্রার্থনা করেন, ঝড়ের বেগটা যেন জোরেই হয়! কেন না ঝড়ে ঝরে-পড়া আম কুড়িয়ে প্রতি বছরই বাড়তি রোজগার হয় ওদের। কুড়নো আম ওদের কাছ থেকে কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। আবার ওই আম ব্যবসায়ীরা তাদের দিয়েই ফালা করে কাটিয়ে নেন। নুনে জারিয়ে ওই কোচানো আম পাঠিয়ে দেওয়া হয় মুম্বই, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে, আচার তৈরির জন্য। মালদহের মানিকচক, রতুয়া, ইংরেজবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ের পরেপরেই গেলে দেখতে পাওয়া যাবে, আমবাগানে বসেই নানা বয়সের মহিলা-পুরুষরা সকাল থেকে সন্ধ্যা আম কুচিকুচি করে কেটে চলেছেন। জেলা উদ্যান পালন দফতরের অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সন্নিগ্রাহীও বলেন, ‘‘ঝরে-পড়া আম ৫০ পয়সা- ১ টাকা কিলোগ্রাম দরে কিনে তা স্লাইস করে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। মালদহে অনেক ব্যবসায়ী ওই পেশায় যুক্ত।’’

খাসা দই

গঙ্গারামপুরের দই যাঁরা খাননি, তাঁরা জানেন না কী হারাচ্ছেন। সেই স্বাদ পেতে একটিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের নয়াবাজার এলাকায় ঢুঁ মারতেই হবে। নিতাই ঘোষ, নেপাল ঘোষ, ব্রজেন ঘোষেরা ঝাঁকায় দইয়ের পসরা সাজিয়ে তৈরি। ঢিমে আঁচে খাঁটি গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় চার রকমের দই— খাসা দই, ক্ষীর দই, সাদা মিষ্টি দই এবং টক দই। বালুরঘাটের তৈরি দইও স্বাদে উত্তম, তবে নয়াবাজারের দইয়ের দাম তুলনায় কম বলে এর ব্যবসা উত্তরবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়েছে। অম্ল-মধুর এক হাঁড়ি খাসা দই সাত দিন রেখে খাওয়া যায়, দাবি কারিগরেদের। নয়াবাজার এবং গঙ্গারামপুরের দইয়ের দাম ৭০-৮০ টাকা কিলো। গঙ্গারামপুর থেকে প্রতি রাতে বাসের মাথায় চেপে দই পাড়ি দেয় শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে।

কাঁপুনির পর

তাঁর পায়ের তলায় সর্ষে, তা বলে খালি পায়ে কখনও ঘোরেননি। আন্দামানের সৈকত থেকে ভুটানের ওয়াংচু নদীর ধার, পায়ে চটিজোড়া থাকতই। সেই ভূপর্যটক ও ভ্রমণ লেখক শিলিগুড়ির গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যকে মঙ্গলবার ভূমিকম্পের ধাক্কায় হারাতে হল চটিজোড়া। গিয়েছিলেন বিধান মার্কেট এক বন্ধুর বাড়িতে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ভূমিকম্পে শিলিগুড়ি কেঁপে উঠলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় পালানোর। শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গৌরী-স্যর বেরিয়ে দেখেন, চটি জোড়া উধাও। তখনও মাটি দুলছে। অগত্যা, খালি পায়েই বিধান রোডে নামলেন ‘স্যর’। ধুলোপায়ে শেষ হল ভূমিকম্প-সফর।

বাজিকর

শব্দবাজি নিয়ে সশব্দে তোপটা তিনিই দেগেছিলেন। কখনও পুলিশের সঙ্গে নুঙ্গি-বজবজের চোরাগলিতে অভিযানে নেমে, কখনও রাত জেগে নোট তৈরি করে শব্দের রাজ্যে একটা পর্দা ঝুলিয়ে দিয়েছেন তিনি। ডেসিবেলের পর্দা। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নামে এককালের প্রায় ঘুমিয়ে থাকা একটা দফতরকে খোঁচা মেরে তুলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। তাঁদের তৎপরতয় শব্দ-দানব অনেকটাই বোতলে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু রাজ্যে সরকার বদলের পরে বেশি দিন আর উৎসাহ ধরে রাখতে পারেননি বিশ্বজিৎ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মুখ্য আইন আধিকারিকের চাকরি ছেড়ে গড়ে তোলেন পরিবেশ সচেতন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

কখনও বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করছেন তো কখনও ন্যুব্জ চটকল শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের পাওনাগন্ডা নিয়ে লড়াই করছেন। বিশ্বজিৎবাবুর এই লড়াইকে সম্মান জানিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক এ বছরই ‘পর্যাবরণ’ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে তাঁকে। নয়াদিল্লিকেই উল্টে প্রশ্ন করেছেন বিশ্বজিৎ— পুরস্কার তো দিলেন, কিন্তু দেশ জুড়ে শব্দ বাজি নিষিদ্ধ করছেন না কেন, কেনই বা প্লাস্টিকের পরিবর্তে চটের ব্যবহার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না? ব্যক্তির হিতে সমষ্টিকে বাধ্য করার লক্ষ্যেই যে তাঁদের লড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন