দুর্দশা: চামটা নদীর অবস্থা এরকমই। নিজস্ব চিত্র
কোথাও নদীর উপরে কংক্রিটের নির্মাণ তৈরি হয়েছে। কোথাও আবর্জনা ফেলে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে নদীর অংশ। আবার কোথাও বদলে দেওয়া হয়েছে নদীর গতিপথ। এ ভাবেই নানা কারণে সংকুচিত হতে হতে বন্ধের মুখে চামটা নদী। শিলিগুড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ওই নদীর দুরবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। চামটার নাব্যতা ফেরাতে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা।
শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক সিরাজ দানেশ্বর বলেন, ‘‘নদী দখল করে কোনও নির্মাণ কাজ করা বেআইনি। বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে কথা বলব। মাটিগাড়ার বিডিওকে বলব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে।’’
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে সুকনা ও সেবকের মাঝে মহানন্দা অভয়ারণ্যের ভিতরে থাকা একটি ঝোরা থেকে ওই নদীর উৎপত্তি হয়েছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু জানিয়েছেন, শিলিগুড়ির বিভিন্ন নদী নিয়ে তাঁদের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে অভয়ারণ্য থেকে বের হয়ে মাটিগাড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চামটা শিলিগুড়ি জংশন এলাকায় মহানন্দা নদীতে মিশেছে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, উৎপত্তি থেকে মোহনা পর্যন্ত বহু জায়গায় নদীর উপর তৈরি হয়েছে কংক্রিটের নির্মাণ। অভিযোগ, মাটিগাড়ার পরিবহণ নগরে একাধিক জায়গায় নদী বুজিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়িঘর। ওই এলাকায় নদীর স্পার, বাঁধ ভেঙেও বাড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, পরিবহণ নগরীর পিছনে বড় বড় যন্ত্র দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে নদী সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। অনিমেষবাবু বলেন, ‘‘পুকুর চুরির কথা শুনেছি। এখানে গোটা চামটা নদীই চুরি হয়ে যেতে বসেছে। এক শ্রেণির ঠিকাদার নদীর অংশ বুজিয়ে বিশাল বিশাল ফ্ল্যাট তৈরি করছে। প্রশাসন ভূমি সংস্কার দফতরকে নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু কী কারণে সবাই চুপচাপ তা বোধগম্য হচ্ছে না।’’
মাটিগাড়ার একটি উপনগরীর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে চামটা। ওই চত্বরে নদী কার্যত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়ি করে আবর্জনা এনে সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সুবীর সরকার বলেন, ‘‘অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার মুখে রয়েছে চামটা নদী। এর ফলে নানারকম সমস্যা তৈরি হবে। জলনিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’’ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে এসেছে। যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তারজন্য আমি প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।’’