প্রতীকী ছবি
করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হল উত্তরবঙ্গে। রবিবার রাত দু’টো নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রেসপিরেটরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভেন্টিলেটরে থাকা করোনা আক্রান্ত বছর পঞ্চাশেকের মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি কালিম্পঙে। তবে শিলিগুড়ির জ্যোতিনগর ও ইস্কন মন্দির রোডে তাঁদের দুটো বাড়ি রয়েছে।
সম্প্রতি তিনি চেন্নাই থেকে ফিরেছিলেন।
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে বহির্বিভাগে দেখাতে আসা ওই রোগিণীকে কোভিড-১৯ স্ক্রিনিং সেন্টারে পরীক্ষার পরে আইসোলেশনে ভর্তি করানো হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে তাঁকে ওই দিন বিকেলে রেসপিরেটরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরু থেকেই তাঁর ভাইরাল নিউমোনিয়া সংক্রমণের চিকিৎসা করা হচ্ছিল। তাঁকে সেই সংক্রান্ত ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে সেই মতো ভেন্টিলেটরে রাখা হয়।
মহিলার মৃত্যর কথা জানার পরই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, পার্সনাল প্রোটেকটেড ইকুইমেন্ট (পিপিই) পোশাক মিলছিল না বলে গোড়া থেকেই অভিযোগ উঠছিল। অনেকেই এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে ভয় পাচ্ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহিলার মৃত্যুর পর সেই উদ্বেগ বেড়েছে। এ দিন হাসপাতালে সুপারের দফতরে গিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নার্সরা। নার্সিং স্টাফদের অভিযোগ, ‘‘করোনা মতো রোগের পরিষেবায় যুক্ত থাকলেও আমাদের নিরাপত্তার দিকটি দেখছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে আমরা কাজ করতে পারব না। আমরা সুপারের কাছে তাই জানাতে এসেছি। যে নার্সিং স্টাফরা করোনা চিকিৎসা পরিষেবার কাজে যুক্ত, তাঁদের কোয়রান্টিনের কী ব্যবস্থা রয়েছে জানতে চাই।’’ একই ক্ষোভ রয়েছে স্বাস্থ্যপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বাকিদের মধ্যেও। তাঁদের অভিযোগ, কাপড় কেটে বানানো মাস্ক ব্যবহার করতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। এন-৯৫ মাস্ক থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই চাওয়া হয়েছে। সে সব আসছে বলে জানানো হয়েছে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বিষয়টি তুলে ধরেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত, হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রবীরকুমার দেবরা। অধ্যক্ষ জানান, সম্প্রতি রেনকোট পাঠানো হয়েছে পিপিই বলে। তা নিয়ে অসন্তোষের মুখে পড়তে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তখন জানান, ওগুলো ফেরত নেওয়া হবে। পিপিই পাঠানো হচ্ছে। তাঁরা জানান, সাফাই কর্মীরাও কাজ করতে চাইছেন না বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁদের জন্য বিমা ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অধ্যক্ষকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বলেন। রোগ নিয়েও তাঁদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান ডিন। যদিও ডাক্তারদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েই গিয়েছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের আইসোলেশনে এ দিন দুপুর পর্যন্ত ৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আইসোলেসনে আগে ভর্তি ৫ জন রোগীর সোয়াব পরীক্ষায় কিছু না মেলায় তাঁদের এ দিন ছুটি দেওয়া হয়। রেসপিরেটরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৩ জন। তাঁদের সোয়াব পরীক্ষাতেও কিছু মেলেনি বলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের তরফে জানানো হয়েছে। তবে তাঁদের অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা চলবে।
করোনা আক্রান্ত মহিলা ওই ওয়ার্ডে মারা যাওয়ার পরে অন্য রোগী এবং আত্মীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। জরুরি বিভাগের দোতলায় ওই রিকু ইউনিট। তাই নীচ তলায় জরুরি বিভাগের কর্মীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মৃতদেহ নিতে টালবাহানায় ১৩ ঘণ্টারও বেশি দেরি হয়। তাতেও কর্মী, চিকিৎসক, নার্সদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়।