ফাইল চিত্র
প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ট্রাকের কেবিনে পড়ে রইলেন ভিন্ রাজ্যের এক ট্রাকচালক। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার রামপুর এলাকার ঘটনা। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা ওই চালক বিজয়েন্দ্র সিংহ জ্বর গায়ে নিয়েই দিল্লি থেকে ট্রাক ভর্তি খইল নিয়ে জেলায় ঢোকেন বলে জানা গিয়েছে। সোমবার বিকেলে রামপুরের একটি কারখানায় আনলোড করার পরেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। বাসিন্দারা জানান, শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল তাঁর। প্রথম দফায় রামপুরে ট্রাকের মধ্যে পড়ে থাকলেও লোকজন আতঙ্কে তাঁর ধারেকাছে যায়নি।
শেষ পর্যন্ত ওই কারখানার মালিক ও স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা টোটো ভাড়া করে তাঁকে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসক তাঁকে দেখে ওষুধ লিখে সন্ধ্যের পর ছেড়ে দেন বলে দাবি। এর পর ফের রামপুরে ফিরে এসে রাতে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন বছর বাইশের বিজয়েন্দ্র। সঙ্গী খালাসি তখন এদিক ওদিক ছুটে ওষুধ জোগাড় করেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ দেয়নি। সারারাত জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ট্রাকের কেবিনে পড়ে থাকেন বিজয়েন্দ্র। রাতেই স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুমে ফোন করে বিষয়টি জানান এবং ওই ট্রাকচালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করতে অনুরোধ করেন।
এ দিন সকাল থেকে ওই চালক আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিভাগে বারবার ফোন করেও কোনও সাড়া মেলেনি। ওই চালকের মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই দেখে ফের তাঁরা জেলা সদরে খবর দেন। একই সঙ্গে অন্য কয়েকটি মহল থেকেও জেলাশাসক থেকে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়। অবশেষে এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে ট্রাকচালক বিজয়েন্দ্রকে উদ্ধার করে ফের গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাসিন্দাদের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। দিল্লি থেকে আগত ওই ট্রাকচালককে কেন জেলায় ঢুকতে দেওয়া হল, এই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, কারণ, সোমবার থেকেই তো গোটা জেলা লকডাউন ঘোষণা হয়। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও কেন সোমবার সন্ধ্যার পরে গঙ্গারামপুর হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল? কেন আইসোলেশন ওয়ার্ডেও কোয়রান্টিন করে রাখা হয়নি? সোমবার রাত থেকে বারবার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করা হয়। তার পরেও প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটে যায় ব্যবস্থা নিতে।
ওই ট্রাকচালককে উদ্ধারের বিষয়ে কেন এত গড়িমসি— এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর মেলেনি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, ‘‘এদিন গঙ্গারামপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই চালককে সুস্থ বলে জানান।’’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি স্বাস্থ্যকর্তারা।