COVID-19

শৈশবের মন খারাপ, কষ্ট কৈশোরের

সব শিশু-কিশোরেরই এখন কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ০৭:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

চিকিৎসকের সামনে রাখা টেবিলে কলমদানি তুলে দেওয়ালে ছুড়ে ভাঙতে চেয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। মা-বাবা কোনও মতে মেয়েকে নিরস্ত করে। তার পরেও ছাত্রীটি চিৎকার করছিল, “আমি কাচের আলমারিটাও ভেঙে ফেলব।” চিকিৎসক বারো বছর বয়সী ছাত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন, “তুমি কেন এগুলো ভাঙতে চাইছ?” চিকিৎসকের ঠান্ডা স্বরে প্রশ্ন শুনে ছাত্রীটি কিছুটা শান্ত হয়ে বলে, “আমার কিচ্ছু ভাল লাগে না।’’ চিকিৎসক জানতে চান, কেন ভাল লাগে না? ছাত্রীটি জানায়, “সারাদিন তো কিছু করার নেই। কোথাও যাওয়ার নেই।” চিকিৎসক বুঝতে পারেন গত এক বছরে স্বাভাবিক সব অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে থাকতে ছাত্রীটি অবসাদে ভুগতে শুরু করেছে। দ্রুত ছাত্রীর ‘কাউন্সেলিং’ প্রয়োজন। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আশিস সরকারের মতে, সব শিশু-কিশোরেরই এখন কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

Advertisement

এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেল স্কুল বন্ধ। কোভিড পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে রয়েছে আঁকার ক্লাস, সাঁতার থেকে শুরু করে ক্রিকেট-ফুটবল প্রশিক্ষণও। বন্ধ পার্কও। স্কুল থেকে খেলা, কোচিং ক্লাস, আঁকা-সাঁতারের অভ্যস্ত রুটিন সে সব বছরখানেক ধরে শিশু-কিশোরের দিনযাপন থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। তার পরিবর্তে যে জীবনে শিশু-কিশোরদের থাকতে হচ্ছে তা একঘেয়ে বলে মনে করছেন অভিভাবকদের সিংহভাগ। সদ্য শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীও শহুরে ছেলেমেয়েদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে বলেন, ‘‘গ্রামের বাচ্চারা খোলা জায়গায় ছুটতে পারে। শহরের বাচ্চাদের তো পার্ক ছাড়া বার হওয়ার উপায় নেই। করোনায় তা বন্ধ।’’

শিলিগুড়ির এক ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সরকারি কর্মীর কথায়, “আমার মেয়ের নবম শ্রেণি। সারাদিন বারান্দায় বসে থাকে। গলির রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স দেখলেই মেয়েটা দৌড়ে ঘরে চলে আসে। ওর মনের ভেতর অশান্তিটা বুঝতে পারি।” জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকের জন্য তৈরি হয়েছিল কোচবিহারের বাসিন্দা ভাস্কর দত্তের ছেলে। ভাস্করবাবু কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিক। তিনি বলেন, “ছেলে এতদিন বেশ পড়াশোনা করছিল। তাতেই ভাল ছিল। পরীক্ষার আগে যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে, তার জন্য কত কী মেনে চলছিল, আমাদেরও বেশি বাইরে বের হতে বারণ করছিল। পরীক্ষা না-ও হতে পারে— এ কথা শোনার পর থেকে পড়ার ঘরেই আর ঢুকছে না। চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।”

Advertisement

বেসরকারি সংস্থার কর্মী শান্তনু রায় জানালেন অন্যরকম সমস্যার কথা। অনলাইন পড়াশোনার জন্য ছেলের হাতে মোবাইল দিতে হয়েছে। পড়াশোনার পরে অবসর সময়ের পুরোটাই সেই মোবাইলেই ছেলে ‘গেম’ খেলছে। শান্তনুর কথায়, “রাতে শুয়েও দেখছি ছেলে মুখ দিয়ে গাড়ি চালানোর মতো শব্দ করছে। মোবাইলে গাড়ি চালানোর একটা গেম খেলে, তারই প্রভাব পড়েছে ঘুমের মধ্যেও।” এ সবের দাওয়াই কী?

চিকিৎসক আশিস সরকারের কথায়, “বাবা-মা বা বড়রা ছোটদের সঙ্গে মন খুলে গল্প করুন। সেটাই কাউন্সেলিং। বিশেষ করে যারা বয়ঃসন্ধির আশেপাশে তাদের বেশি সময় দিতে হবে।” মানসিক অবসাদের ছোঁয়া মনে লেগেছে কিনা তা বোঝার উপায় আচরণেই। শিশু কিশোররা হঠাৎ খিটখিটে হয়ে গেলে বুঝতে হবে, তার মনের যত্ন প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বেশিরভাগ চিকিৎসক মনোবিদরা দাবি করছেন, প্রথমে বাড়িতে বড়দের বেশি করে সময় এবং গুরুত্ব দিতে হবে শিশু-কিশোরদের। তাতেও আচরণ স্বাভাবিক না হলে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement