Coronavirus

সকালের সাইরেন নেই, জীবনও এখন ছন্নছাড়া

আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে যা আয় করি, তা দিয়ে দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে ছ-জনের সংসার কোনও রকমে চলে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০২:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি

আচমকাই কেমন সব ওলটপালট হয়ে গেল। চা শ্রমিক হিসেবে আমাদের একদিন কাজ বন্ধ থাকলেই সংসারে টান পড়ে। এখন পনেরো দিনেরও বেশি হয়ে গেল আমাদের কোনও কাজ নেই। বাগান বন্ধ। কাজও বন্ধ। তাই সামনে যে শুধুই অন্ধকার, এটা বুঝতে পারছি।

Advertisement

আমি এবং আমার স্বামী ছোট্টু মাহালি দুজনেই চা শ্রমিক। বাগানে আমাদের কাজের জীবনটা নিয়মে বাঁধা। সাতসকালে সাইরেন বাজলেই ছুটতে হয়ে বাগানে। আবার বিকেলে সাইরেনের শব্দই আমাদের বাড়ি ফেরার কথা মনে করিয়ে দেয়। একেবারেই ছকে বাঁধা জীবন। কাজ না করলে ঘরে উনুন জ্বলে না। সেই কর্মচঞ্চল জীবনটাই এখন চার দেয়ালে আটকে। কর্মহীন, উপার্জনহীন একটা সংসার কতদিন এ ভাবে ধারের টাকায় চলবে, জানি না।

আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে যা আয় করি, তা দিয়ে দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে ছ-জনের সংসার কোনও রকমে চলে। বড়ছেলে অলোক বিএ পাশ করে একটি কম্পিউটার সেন্টারে কাজ করত। সেই কাজ বন্ধ। ছোট ছেলে চন্দন অন্ধ্রপ্রদেশে আটকে রয়েছে। বড়মেয়ে সুনীতা এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ছোটমেয়ে প্রতিমা মাধ্যমিক দিয়েছে। ওদের পড়াশোনা, তার উপর সংসারের খরচ। লকডাউন সব কিছু ওলটপালট করে দিল। উপার্জন ছাড়া এত বড় সংসার চলবে কী ভাবে সেটা ভাবতে গিয়ে অথৈ জলে হারিয়ে যাচ্ছি।

Advertisement

মার্চে যে কটা দিন কাজ করেছিলাম, শুধু সেইটুকু মজুরি মিলেছে। রেশন থেকে ১৫ কেজি চাল, ১০ প্যাকেট আটা পেয়েছি। মুদির দোকানে চার হাজার টাকা ধার, আনাজের দোকানে দুই হাজার। মেয়েদের টিউশনির টাকাও অনেক জায়গায় বাকি রয়েছে। ধার মেটাতে পারিনি কারও।

দু’বেলা কোনও মতে সেদ্ধ ভাত, কোনওদিন ডাল ও আলু ভাজা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। আগের সপ্তাহে একদিন অন্তত ছেলে মেয়েগুলোর মুখে মাছ বা মাংস তুলে দিতে পারতাম। এখন তো আমাদের বাগানেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না। টাকাটা জোগাড় হবে কোত্থেকে যে, মাছ-মাংস খাব? শুনছি লকডাউন আরও কিছু দিন বাড়ানো হবে। কিন্তু আমাদের কী ভাবে দিন চলবে? ছেলেমেয়েদের মুখে কী তুলে দেব?

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন