প্রতিবারের ধারা বজায় রইল এ বারও। উৎসবের মরসুম এলেই তাত বাড়ে বাজারে। এ বারও একই ছবি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে। কোথাও আগুন মাছ মাংস। কোথাও আবার হাত পুড়ছে আনাজ কিনতে গিয়ে।
জলপাইগুড়ি
ব্রহ্মপুত্রের ইলিশে স্বস্তি জলপাইগুড়ির মাছের বাজারেও।
মাছ ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, এ বারের ভাইফোঁটার বাজার ছেয়ে গিয়েছে অসম থেকে আসা ব্রহ্মপুত্রের ইলিশে৷ পাঁচশো থেকে সাতশো গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াইশো থেকে ৪০০ টাকায়৷ আর তা কিনতে ভাইফোঁটার ঠিক আগে ভিড় উপচে পড়েছে বাজারে৷ দিনবাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক দেবু চৌধুরীর কথায়, ‘‘শুধু জলপাইগুড়িই নয়, গত কয়েকদিন ধরে অসম থেকে ব্রহ্মপুত্রের ইলিশ প্রচুর পরিমাণে ঢুকছে একেবারে ডুয়ার্স পর্যন্ত৷ একসঙ্গে প্রচুর ইলিশ ঢুকতে থাকায় দামও বাঙালীর নাগালের মধ্যেই৷ ’’
ইলিশের দাম পড়ে যাওয়ায় বাজারে অন্য মাছের দামও কিছুটা কম৷ কিন্তু তারপরও বেশিরভাগ মানুষই ছুটছেন সেই ইলিশের দিকেই৷ শহরের বাসিন্দা দীপা সরকারের কথায়, ‘‘গতবার ভাইফোঁটায় দাদাকে ইলিশ খাওয়াতে পারিনি৷ এ বার খাওয়াবো৷’’
তবে ভাইফোঁটার বাজারে জলপাইগুড়িতে আনাজের দাম কিন্তু আকাশছোঁয়া৷ আলু ১২ থেকে ১৫ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পেঁয়াজকলি ২০০ টাকা, লঙ্কা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ নতুন ফুলকপি বাজারে এলেও তা দামের জন্য কিনতে পারছেন না তারা। নতুন আনাজের মধ্যে বাজারে চাহিদা বেশি ফুলকপি ও শীতালি বেগুনের। নতুন ফুলকপি ১০০ টাকা কেজি, শীতালি বেগুন ৭০ টাকা কেজি।
আনাজের দামে হাত পুড়ছে ধূপগুড়ির বাসিন্দাদেরও। কারণ দাম চড়েছে বেশ অনেকটাই। অন্যদিকে শুক্রবার বৃষ্টির জন্যে মার খেল ভাইফোঁটার বাজার। শুক্রবার দুপুর থেকেই ডুয়ার্সে শুরু হয় লাগাতার বৃষ্টি। কাকভেজা হয়েই ভাইফোঁটার বাজার সারতে বের হয়েছেন মানুষ।
মালদহ
ভাইফোঁটা। তাই একলাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে মাছ মাংস-সহ সব কিছুরই দাম। শুক্রবার ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ছিল ৭০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০ টাকা। এমনকী, রুই ও কাতলা মাছ যা সাধারণভাবে কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায় বিক্রি হয় তার দাম ছিল কেজি প্রতি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। মাছের মতো দাম বেড়েছে মাংসেরও। খাসির মাংস ৫২০ টাকা, দেশি মুরগী মাংস ৪২০ টাকা কেজি।
শুধু মাছ, মাংসই নয়, দাম বেড়েছে মিষ্টিরও। প্রতিষ্টিত মিষ্টির দোকানগুলিতে, ছোট রসগোল্লা পাঁচ টাকা ও বড়ো রসগোল্লা দশ টাকা প্রতি পিস, লালমোহন (ছোট) প্রতি পিস পাঁচ টাকা ও বড়ো ১০ টাকা, ল্যাংচার দাম ১০ টাকা, ছানার সন্দেশ ১০ টাকা, ক্ষীরের সন্দেশ ১০টাকা এবং ক্ষীরের কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মিস্টির সাইজও অন্য দিনের তুলনায় অনেকটাই ছোট বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
আলিপুরদুয়ার
এ বছর ধুবরি থেকে ইলিশের সরবরাহ রয়েছে। তাই আলিপুরদুয়ার বাজারে একমাত্র নাগালে ইলিশের দাম। ২২০ টাকা কেজিতে দেদার মিলছে ইলিশ। কিন্তু চিংড়ি ৬০০ টাকা, বোরোলি ৬০০ টাকা, পাঁঠার মাংস ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মুরগির মাংস ২০০-২২০ টাকা। আলিপুরদুয়ারের বড় বাজারের আনাজ বিক্রেতা রাজু সাহা জানান, এ বছর আনাজের জোগান স্বাভাবিক। তাই ভাইফোঁটায় দাম খুব একটা বাড়েনি। আলিপুরদুয়ারের চৌপথির মিষ্টি বিক্রেতা শৌভিক মহন্ত জানান, ভাইফোঁটার জন্য বরাবরই বিশেষ আয়োজন করেন তাঁরা। এ বারও বোনেদের চাহিদা মেনে রসমালাই, মালাই চপ, বসন্তবাহার, ক্ষীর দই, কাজু বরফি, বেসন ও ঘিয়ের লাড্ডু ও নানা রকম সন্দেশ তৈরি করা হয়েছে।