জয়ী: বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। নিজস্ব চিত্র
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের হ্যাটট্রিক করল বিজেপি। ২০১৪ সালের চাইতেও বেশি ব্যবধানে এ বার দার্জিলিং জয় করল নরেন্দ্র মোদীর দল। এ দিন গভীর রাত পর্যন্ত গণনায় বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৪৩ ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলে অমর সিংহ রাইয়ের থেকে এগিয়ে আছেন। মোট ৮ লক্ষ ৮১ হাজার ৬৪৯টি ভোটের মধ্যে রাজু পেয়েছেন ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৯৮ এবং অমরের ঝুলিতে গিয়েছে ২ লক্ষ ১১ হাজার ২১৭টি ভোট।
ভোটের অঙ্কে অনেকটাই পিছিয়ে ওই কেন্দ্রে তৃতীয় হয়েছেন কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার, সিপিএম আছে তারও পরে। তবে একাধিক নির্দল প্রার্থীর থেকেও কম ভোট পেয়েছেন জাপের প্রার্থী হরকাবাহাদুর ছেত্রী। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বেশ কয়েক জন। জয়ের ব্যবধানে সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং যশোবন্ত সিংহকেও পেছনে ফেলে দিয়েছেন রাজু। বিজেপির পাহাড় কমিটির সভাপতি মনোজ দেওয়ানের দাবি, এত বেশি ব্যবধানে এর আগে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র থেকে কোনও প্রার্থী জয়ী হননি। বিমলপন্থী মোর্চা ছাড়াও এ বার বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছিল জিএনএলএফ, সিপিআরএম সুমতি মোর্চা-সহ পাহাড়ের একাধিক আঞ্চলিক দল।
জোটের দলগুলির সমর্থন ছাড়াও দেশ জুড়ে বিজেপি হাওয়া পাহাড়কে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে বলেই মত বিনয়পন্থীদের একাংশেরও। পাহাড়ের উন্নয়ন, শান্তি প্রতিষ্ঠা, পাট্টা প্রদান, ১১টি জন গোষ্ঠীকে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়া-সহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে এ বারের ভোটে প্রচার চালিয়েছিল তৃণমূল ও বিনয়পন্থী মোর্চা। অন্য দিকে, বিজেপির হাতে সে ভাবে কোনও প্রচারের বিষয় ছিল না। উল্টে এনআরসি নিয়ে ভোটের আগে বিপাকে পড়েছিল পদ্ম শিবির। বিদায়ী সাংসদ অহলুওয়ালিয়ার মন্তব্যে পাহাড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। সব দল একত্রিত হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে। ফলে পাহাড়ে বিজেপি কতটা সুবিধা করতে পারবে, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল অনেকের মনেই। মোর্চা দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ে কেউই একচেটিয়া ভোট পাবে না, বলেই ধরে নিয়েছিল সব দল। দার্জিলিং কেন্দ্রের অন্তর্গত সমতলের চারটি বিধানসভার দু’টি কংগ্রেসের, একটি বামফ্রন্টের এবং একটি তৃণমূলের দখলে আছে। ফলে সমতলের ভোটও বিভিন্ন বাক্সে ভাগ হবে, নিশ্চিত ছিলেন অনেকেই। সেই ভাগাভাগির অঙ্কে অনেকেই এই কেন্দ্রে তৃণমূলকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখছিলেন। যদিও শুরু থেকেই বিমলপন্থী মোর্চা ও বিজেপির দাবি ছিল, পাহাড় ও সমতল দুই জায়গাতেই একচেটিয়াভাবে ভোট পাবেন তাঁরা। ফল প্রকাশের পর বিমলপন্থী মোর্চার মুখপাত্র বিপি বজগাই বলেন, ‘‘আমরা যে ঠিক বলেছিলাম, তা প্রমাণ হয়ে গেল।’’ চোপড়া ছাড়া সমতলের বাকি তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মোট লক্ষাধিক ভোটে লিড পেয়েছে বিজেপি। পাহাড়ের তিনটি বিধানসভাতেও এগিয়ে আছেন রাজু।
এর মধ্যেই রাজুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী অমর সিংহ রাই। তিনি বলেন, ‘‘জনগণের রায় মাথা পেতে নেব। কেন মানুষ আমাদের থেকে দূরে সরে গেল, তা বোঝার চেষ্টা করব। যিনি জয়ী হয়েছেন, পাহাড়ের স্বার্থে তাঁকে প্রয়োজনে সাহায্য করব।’’ রাজু বলেন, ‘‘যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জয়ী হয়েছি, আগামী পাঁচ বছর তা পালন করব।’’
এ দিন একবারের জন্যেও ভানুভবনের গণনা কেন্দ্রে আসেননি অমর। সেখান থেকে খানিকটা দূরে একটি হোটেলে বসেই খবরাখবর নিচ্ছিলেন তিনি। দেড় লক্ষের বেশি ব্যবধানে রাজু এগিয়ে গিয়েছেন জানতে পেরে বিকেলেই হোটেল ছেড়ে চলে যান অমর। অন্য দিকে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গণনা কেন্দ্রে ছিলেন রাজু। মাঝেমধ্যে বাইরে এসে টিভিতে দেশের খবরও নেন তিনি।