ভিড়: বাগডোগরা বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র
অনেকটা যেন অস্থায়ী শিবির বা ক্যাম্পের মতো! সপ্তাহের চার দিন সকাল, বিকেল হলেই তড়িঘড়ি বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন শুল্ক, অভিবাসন, নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত কর্মী, অফিসারেরা। মেরেকেটে সকলের কাজ ঘণ্টাখানেকের। পারো-বাগডোগরা-ব্যাঙ্ককের আন্তর্জাতিক বিমানটি ওঠানামা করতেই সকলের কাজ শেষ। চেয়ার-টেবিল ফাঁকা হতেই তাতে দখল নিয়ে নেন বিমানবন্দরের অন্য কর্মীরা।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিমানটি আন্তর্জাতিক হলেও সরকারি ভাবে বাগডোগরা বিমানবন্দরের নামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শব্দটি যুক্ত হয়নি। আন্তর্জাতিক টার্মিনাল তো দূরের কথা, বিদেশি বিমানের আলাদা করে কোনও লাউঞ্জ, শৌচালয়, রেস্তোরাঁও নেই। কয়েক মাস আগে আলাদা একটি সিকিউরিটি হোল্ড এলাকা অবশ্য তৈরি হয়। কিন্তু পরে যাত্রী সংখ্যার চাপে তা অন্য বিমানের যাত্রীদের জন্যও দিনভর ব্যবহার হচ্ছে। এর সঙ্গে বিমানবন্দরে থাকা অন্য পরিষেবাগুলিকে ওই সময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় আন্তর্জাতিক বিমানটির জন্য। চার বছর আগে, ২০১৪ সালে একটি বিমান সংস্থা বাগডোগরা থেকে কাঠমান্ডু অবধি মাস তিনেক বিমান চালিয়েছিল। সেই সময়ও একই ভাবে নির্দিষ্ট সময় ধরে চালু থাকত শুল্ক ও অভিভাসন ব্যবস্থা।
প্রতি মঙ্গলবার এবং শুক্রবার ব্যাঙ্কক থেকে বিমানটি বাগডোগরা হয়ে ভুটানের পারো যায়। প্রথম দিন সকাল সাড়ে ৮টা এবং শুক্রবার ভোরে সাড়ে ৬টায় শুল্ক, অভিভাসন নিয়ে অস্থায়ী পরিষেবা চালু হয়। আবার সোমবার, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টায় পরিষেবা চালু থাকে। মঙ্গল, শুক্র ও সোমবার ফাঁকা বিমানবন্দরে বিমানটি ওঠানামা করলেও বৃহস্পতিবার জমজমাট বিমাবন্দরে বিমানটি আসে। তখন নতুন সিকিউরটি হোল্ড এলাকায় অন্য যাত্রীদের ঢোকান হয় না। এতে টার্মিনালের ছোট্ট পরিসরে ভিড়ে ঠাসাঠাসি পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত সপ্তাহে এক দিন বিমানবন্দরে রেকর্ড পরিমাণ ৪ হাজার যাত্রী এসেছিলেন। সে দিন বিমানবন্দরে ঠিকমতো দাঁড়ানোর পরিস্থিতিও ছিল না।
বিমানবন্দরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়ার (এআইআই) তরফে শুল্ক, পুলিশ এবং অভিভাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ছ’মাসে এক দফায় চিঠি, সময়সূচি জানিয়ে দিয়ে বাগডোগরায় বিদেশি বিমান ওঠানামার বন্দোবস্ত করার জন্য জানান হয়। বাগডোগরা মাটি ছুঁয়ে যাওয়া কোনও বিদেশি বিমান বা ‘অন রিয়োকেস্ট’ বিদেশি বিমানের জন্য এই ব্যবস্থা। গুয়াহাটি বা কলকাতা বিমানবন্দরের মতো একাধিক বিদেশি বিমান বাগডোগরা থেকে সরাসরি চালু হলেই একমাত্র মিলতে পারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তকমা। যার প্রথম শর্ত আলাদা টার্মিনাল ভবন। তবে তা কবে হবে, জানেন না খোদ এএআই-র অফিসারেরাই।
অফিসারেরা জানান, ১৮০ আসনের বোয়িং বিমানটিতে বাগডোগরা থেকে কমবেশি ৩০ জন যাত্রী ওঠানামা করেন। ইতিমধ্যে সিকিমের পাকিয়ং বিমানবন্দরটিও চালু হয়েছে। আগামী ১ জুন থেকে ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা অবধি বিমানবন্দর সচল থাকবে। তাতে সিকিম, দার্জিলিং-কালিম্পং পাহাড় ছাড়াও উত্তর পূর্বাঞ্চলের গুয়াহাটি-সহ বিভিন্ন জায়গার বিমানও বাড়তে পারে। আগামী দিনে আরও বিদেশি বিমান বাগ়ডোগরায় আসারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সমস্যা দাঁড়িয়ে একটাই জায়গায়, নতুন টার্মিনাল ভবন। বিমানবন্দর অধিকর্তা রাকেশ সহায় বলেন, ‘‘নতুন টার্মিনাল ভবন তৈরি না হওয়া অবধি বিদেশি বিমানের জন্য পুরোপুরি আলাদা ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।’’