গৌতমের ছুট বনাম জোট-হাওয়ার যুদ্ধ

বল পায়ে ছুটছেন অশোক। আগের দুটো বড় ম্যাচে শিলিগুড়ির মাঠ কব্জা করার সুবাদে টিম-অশোকের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। সেই ‘মডেল’-এ বিপক্ষের জালে বল জড়াতে আসরে নেমে পড়েছে বালুরঘাট, মালদহ, রায়গঞ্জ, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারও।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

ভোটের আগে দুই সেনাপতি।অশোক ভট্টাচার্য এবং গৌতম দেব।—বিশ্বরূপ বসাক

বল পায়ে ছুটছেন অশোক। আগের দুটো বড় ম্যাচে শিলিগুড়ির মাঠ কব্জা করার সুবাদে টিম-অশোকের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। সেই ‘মডেল’-এ বিপক্ষের জালে বল জড়াতে আসরে নেমে পড়েছে বালুরঘাট, মালদহ, রায়গঞ্জ, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারও। আর সেই জয়ের ঘোড়াকে থামাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কত কিছুই না করেছেন প্রতিপক্ষ উত্তরের অলিখিত ‘ক্যাপ্টেন’ গৌতম। হাতিয়ার ‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর’, এসজেডিএ, এনবিএসটিসি। আজ, রবিবার উত্তরবঙ্গের প্রথম দফার ভোটে ৪৫ আসনের লড়াইটা মূলত লড়ছেন এই দু’জনই।

Advertisement

ভোটের ময়দানে এমন মুখরোচক কাল্পনিক ধারাবিবরণী ভেসে বেড়াচ্ছে ‘ফুটবল-পাগল’ উত্তরবঙ্গে।

কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে ফেন্সিং বা তলোয়ার যুদ্ধের সঙ্গেও তুলনা করছেন। নেট-এর এক দিকে যদি শিলিগুড়ি মডেলের জনক অশোক ভট্টাচার্য থাকেন, তো অন্য দিকে তৃণমূল জমানায় তৈরি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বিদায়ী মন্ত্রী গৌতম দেব। ‘টিম গৌতম’ ভালই জানে, ২০১১ সালের ম্যাচে যে ফল হয়েছিল, তা ধরে রাখলেই শুধু হবে না, বরং বাড়াতে হবে। নাহলে তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে দলেই প্রশ্ন উঠে যাবে। অন্যদিকে অশোক-শিবিরও বুঝতে পারছে, শিলিগুড়িতে শুধু জিতলেই হবে না। আগের চেয়েও বেশি আসন পেতে হবে। অত্যুৎসাহী জোট সমর্থকেরা এমনও আশা করছেন, ‘মডেল’-এর সুবাদে বেশির ভাগ জেলায় বিপক্ষকে শূন্য রানে ফেরানোর সুযোগও মিলতে পারে।

Advertisement

ভোটের বাতাস কী বলছে তা আঁচ করতে ঝানু রাজনীতিক গৌতমবাবুর খুব একটা অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তাই মাস তিনেক আগে ‘বাইপাস সার্জারি’ হলেও ডাক্তারদের বারণ উপেক্ষা করে নিবিড় প্র্যাকটিস করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘টিম গৌতম’-এর ড্রেসিংরুম বলছে, নিজের নির্বাচনী এলাকায় পথসভার হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। পদযাত্রা তো ৫০০ কিলোমিটার হবেই। গ্রামে-গঞ্জে রাত কাটাতে গিয়ে পায়ে এমন সংক্রমণ হয়েছে যে গৌতমবাবুকে রোজ হাতের শিরা দিয়ে ৫টি করে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হয়েছে। তাঁর উত্তেজনা, চিৎকার শুনে খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আস্তে গৌতম, তোমার না বাইপাস হয়েছে! এত চিৎকার করার দরকার নেই।’’

তবুও ‘টিম গৌতম’ মরিয়া। গত পাঁচ বছর ধরে উত্তরবঙ্গের জেলায় শতাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব ছিল তাঁরই দফতরের। বালুরঘাটের নাট্য অ্যাকাডেমি থেকে জলপাইগুড়ির স্টেডিয়াম, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা উত্তরকন্যা গড়ার ফায়দা কতটা মিলতে পারে তার হিসেব কষছেন। কিন্তু, ড্রেসিংরুমের মধ্যে এত হট্টগোল, গোলমাল, কোন্দলে চমকে যান অনেকেই। কোথাও ঠিকাদারি নিয়ে গোলমাল, কোথাও তোলা আদায়ের অভিযোগ, আবার এসজেডিএ কেলেঙ্কারি, সব কিছুই মাথায় রেখে এগোতে হয়েছে ‘টিম গৌতম’-কে।


ভোট কর্মীদের নিজস্বী-বিলাস।—নিজস্ব চিত্র

বিপক্ষের বিরূদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তো আছেই। পুরভোট, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে জয়ের পরে এ বারের ভোটের ম্যাচে কংগ্রেসকে সরাসরি কাছে পেয়ে ‘টিম অশোক’ তো ফুটছে। কখনও রায়গঞ্জে গিয়ে মোহিত সেনগুপ্তের হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আবার কখনও মালদহে গিয়ে অধীর চৌধুরীর হাত ধরে ইংরেজবাজারে ঢল নামিয়ে দিয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র। মালবাজার, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়িতেও তাঁকে দেখেই জয়ের স্বপ্নে একযোগে ধ্বনি দিতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস-সিপিএম সমর্থকদের।

ড্রেসিংরুমের খবর, তাই ভোটের আগের দিন শনিবার দিনভর শিলিগুড়ির মাঠ সাজানোর ফাঁকে বিশ্বনাথ চৌধুরী থেকে শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় কিংবা সুখবিলাস বর্মা অথবা বিশ্বরঞ্জন সরকারের কাছেও ‘টিপস’ পৌঁছে দিয়েছেন। অশোকবাবু বলছেন, ‘‘ম্যাচ হাতের মুঠোয় আসাটা সময়ের অপেক্ষা। তবুও যতক্ষণ না শেষ বাঁশি বাজছে, ততক্ষণ আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।’’

বড় ম্যাচ বলে কথা! তাই গৌতমবাবুকেও ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে ঘর গোছানোর ফাঁকে খবরাখবর নিতে হচ্ছে বাকি ৫ জেলার। বিপ্লব মিত্র থেকে শঙ্কর চক্রবর্তী, অমল আচার্য থেকে হামিদুর রহমান কিংবা অনন্তদেব অধিকারীর সঙ্গেও ফোনালাপ চালাচ্ছেন গৌতমবাবু। ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে গৌতমবাবু বলছেন, ‘‘যে ভাবে উত্তরের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছি, একটার পর একটা কাজ করেছি তা সকলে দেখেছেন। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি শুধু নয়, ভাল ফলের আশা করছি অন্যত্রও। কারণ, কাজের আবদার করছেন মানুষ।’’

শিলিগুড়িতে নিজের খাসতালুকে পরপর দুটো বড় ম্যাচে (পুরসভা, মহকুমা পরিষদ) মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘টিম গৌতম’। তৃতীয় ডার্বিতেও কি একই হাল হবে? জোটের হাওয়ায় হাসি চওড়া হচ্ছে অশোকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন