জমি দখল নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে ছিটমহলে

জমি মাফিয়া চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছিটমহলগুলিতে। কারও আগে থেকেই জমি রয়েছে ছিটমহলে। কেউ আবার নতুন করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। তা নিয়েই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। মশালডাঙা ছিটমহলে দুষ্কৃতী হামলার পিছনে জমি মাফিয়াদেরই হাত রয়েছে বলেছে সন্দেহ করছে প্রশাসন ও পুলিশ অফিসাররা। শনিবার রাতে ওই ছিটমহলে এক বাসিন্দার বাড়িতে হামলা করে ২০-২৫ জনের দুষ্কৃতী দল।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০২:১৬
Share:

জমি মাফিয়া চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছিটমহলগুলিতে। কারও আগে থেকেই জমি রয়েছে ছিটমহলে। কেউ আবার নতুন করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। তা নিয়েই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে।

Advertisement

মশালডাঙা ছিটমহলে দুষ্কৃতী হামলার পিছনে জমি মাফিয়াদেরই হাত রয়েছে বলেছে সন্দেহ করছে প্রশাসন ও পুলিশ অফিসাররা। শনিবার রাতে ওই ছিটমহলে এক বাসিন্দার বাড়িতে হামলা করে ২০-২৫ জনের দুষ্কৃতী দল। বাড়িতে লুঠপাট চালানোর পাশাপাশি একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ছিটমহলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকা থেকে উৎখাত করে পুরো জমি দখল করাই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য। না হলে অন্তত ভয় দেখিয়ে কিছু জমি নিজেদের কব্জায় নিতে চায় জমি মাফিয়ারা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগও করেছেন।

দিনহাটার মহকুমাশাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, “জমি মাফিয়া চক্রের বাড়বাড়ন্তের অভিযোগ আমাদের কাছেও পৌঁছেছে। জমি দখলের চেষ্টায় কেউ গণ্ডগোল করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, ছিটমহলের জমির ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন। বিনিময় প্রক্রিয়ার কাজ এগোলেই জমির কাগজপত্র দেখা হবে। প্রশাসনও একটি সমীক্ষা করবে। তার পরেই যার জমি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে। কোনও ভাবেই কেউ যাতে নকল দলিল তৈরি করতে না পারে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে প্রশাসন। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ছিটমহলে জোর করে জমি দখল এবং বাসিন্দাদের জিনিসপত্র ভয় দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। ছিটমহল সমস্যা মিটে যেতে দেখে তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গণ্ডগোল করে নিজেদের ফয়দা খোঁজার চেষ্টা করছে। আমরা পুরো বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছি।”

ছিটমহল বিনিময় হওয়ায় ভারতের হাতে চলে এসেছে ৫১টি ছিটমহল। যার মধ্যে রয়েছে সাত হাজার একর জমি। প্রায় ১৪ হাজার মানুষ রয়েছেন ওই ছিটমহলগুলিতে। বিনিময় কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত ভূখন্ডের মধ্যে ছিল বাংলাদেশি ছিটমহল। আশির দশক পর্যন্ত ওই ছিটমহলের বাসিন্দারা অনেকেই বাংলাদেশে নিজেদের জেলায় গিয়ে নিজস্ব জমি রেকর্ড করিয়েছেন। এ ছাড়াও অনেকের কাছে স্বাধীনতার সময়কালের জমির কাগজপত্র রয়েছে। পরের দিকে অনেকে আবার ভারতীয় ভোটার কার্ড তৈরি করে ঠিকানা বদলে নিয়ে ভারতের বাসিন্দা হয়েছেন। তাঁদেরও জমি ছিটমহলে রয়েছে। এ ছাড়াও ভারতীয় কিছু বাসিন্দা ছিটমহলে প্রচুর পরিমাণ জমি ভোগদখল করছেন। অনেকে আবার ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে জমি দখল করেও রেখে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

জমি দখলের ওই চক্র ছিটমহলগুলিতে এখনও সক্রিয় হয়ে রয়েছে। তারা মনে করছে, বাংলাদেশি ছিটমহলগুলি যেহেতু ভারতের অংশ হয়েছে, এখন ওই এলাকার জমি নিয়ে সরকার আলাদা কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। যার যার দখলে জমি থাকবে তা তাঁদেরই হবে। এমন মনে করেই এখন আরও বেশি করে জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাঁরা। দীপ্তিমানবাবু দাবি করেছেন, মশালডাঙা বাদেও বাকালির ছড়া, পোয়াতুর কুঠি সহ বেশ কয়েকটি ছিটমহলে ওই চক্র বেশি সক্রিয়।

কমিটির আরও অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন সময় ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাড়িতে হামলা করত। ভয় দেখিয়ে ক্ষেতের ফসল, গবাদি পশু লুঠ করে নিয়ে যেত তাঁরা। দুষ্কৃতীরা সব সময় রাজ্যের শাসক দলের আশ্রয়ে থাকত। এবারেও যে দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরেছে, সে শাসক দল তৃণমূলের কর্মী বলেই অভিযোগ। তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, বিষয়টি রাজনৈতিক নয়। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এখন কেউ জমি দখল করে রাখতে পারবেন না। এখন সরকার পুরো বিষয়টি দেখছে।”

এদিন বাংলাদেশের ভারতীয় ছিটমহল থেকে যে সমস্ত বাসিন্দারা এপারে আসবেন, তাঁদের জন্য জমি দেখেন মহকুমাশাসক। তিনি জানান, আপাতত বেশ কয়েকটি শিবির করা হবে। সেখানে ওই পাশ থেকে আসা বাসিন্দাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। পরে সময় মতো তাঁদের স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ছিটমহলের বাসিন্দাদের বেশ কয়েকজন এদিন মহকুমাশাসকের কাছে শিবির করার জন্য জমি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন