লক্ষ্মীপুজোয় বাজার চড়া, ঐতিহ্য রাখতে মাথায় হাত

মঙ্গলবার সকালে বাজারে এসে প্রথমে খানিকটা হম্বিতম্বি করে, চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে ঝিমিয়ে বসলেন অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মী সুপ্রকাশ দত্ত। বললেন, ‘‘ফুলকপি হোক বা আপেল, যে দাম শুনছি তাকে আকাশ ছোঁয়া বললেও বুঝি কম বলা হয়। বাজেটে তো কুলোবেই না।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৫
Share:

পদ্ম-কাঁটা: যে পদ্ম ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন বিক্রি হচ্ছে পনেরো টাকাতেও। নিজস্ব চিত্র।

পূর্বপুরুষদের কিছু জমিজমা ছিল। তাই কোজাগরী পূর্ণিমাতে ধুমধাম করে লক্ষ্মীপুজো হতো জলপাইগুড়ির দত্তবাড়িতে। এখন সেই জাঁক আর নেই। তবে ঐতিহ্য রক্ষায় বাড়িতে ছোট মাটির প্রতিমা আনা হয়, পরিচিতদের ডেকে ভোগের খিচুড়িও খাওয়ানো হয়। এ বার এটুকুও বুঝি আর রক্ষা করা যাবে না।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে বাজারে এসে প্রথমে খানিকটা হম্বিতম্বি করে, চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে ঝিমিয়ে বসলেন অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মী সুপ্রকাশ দত্ত। বললেন, ‘‘ফুলকপি হোক বা আপেল, যে দাম শুনছি তাকে আকাশ ছোঁয়া বললেও বুঝি কম বলা হয়। বাজেটে তো কুলোবেই না।’’

এ বছর বন্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল। এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তার জেরে ফল-ফুল-আনাজ সবেরই দাম বেড়েছে। যদিও সে যুক্তি মানতে চাননি মালদহের প্রশান্ত সরকার। তাঁর দাবি, ‘‘ দু’দিন আগেই ৭০ টাকা দিয়ে ফুলকপি কিনেছি। তখন কি বন্যা ছিল না।’’ মঙ্গলবার মালদহের রথবাড়ি বাজারে ফুলকপি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বাঁধাকপি ৫০ টাকা কেজি, মূলো ৪০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে। মকদমপুর, চিত্তরঞ্জন, ঝলঝলিয়া সব বাজারেই চড়া দাম। দাম বেড়েছে পদ্ম ফুলেরও। যে পদ্ম পাঁচ থাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তা লক্ষ্মীপুজো আসতেই ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতাদের দাবি। হাটখোলা ফুল বাজারের এক পদ্মফুল ব্যবসায়ী ছোটন মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বার বন্যায় মালদহের খাল-বিলের সমস্ত পদ্ম ভেসে গিয়েছে। এখন ফরাক্কা ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকে পদ্ম এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই দাম বেড়েছে।’’ বেগুনের দর ৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল রায়গঞ্জের মোহনবাটি বাজারে। মোহনবাটি বাজারের প্রবীণ আনাজ ব্যবসায়ী কমলেশ সাহার দাবি, ‘‘বাজারে চাহিদার তুলনায় আনাজের জোগান কম। তাই পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরো বাজারে বিভিন্ন আনাজের দাম গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।’’ শিলিগুড়ি বাজারে লাফিয়ে বেড়েছে ফলের দরও। মঙ্গলবার বিধানমার্কেট এক ডজন কলা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। আপেলের দর ছিল কেজি প্রতি দেড়শো টাকা। জলপাইগুড়ির বাজারে এক একটি নারকেল বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। ভাল মানের নারকেল ৭০ থেকে আশি টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কোচবিহারের একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক রানা গোস্বামী অবশ্য দর খুব একটা বেশি হয়েছে বলতে মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, “লক্ষ্মীপুজোর বাজার এ বারে ভাল নয়। এখন পর্যন্ত জিনিসপত্রের দাম অনেকটা একইরকম আছে। হাতে আর একদিন সময়। সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।”

Advertisement

ধানের শিসের দাম শুনেই চমকে ওঠেন গৃহবধূ মৌসুমী রায়। বালুরঘাটের তহবাজারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ধানের শিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। পদ্ম ফুলের এক জোড়া কুড়ি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। শসা, কলা, আপেল মোসাম্বি কেজি প্রতি ৯০ থেকে ২০০ টাকা। এ দিন সন্ধ্যায় তহবাজারে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘ভিড় এড়াতে তিন দিন আগেই বাজারে এসেছি। ভেবেছিলাম দামও কম থাকবে। কিন্তু দাম শুনে তো রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।’’ খিচুড়ির সামগ্রীও চড়া। সরু দানার আতপ চালকে চিনি শক্কর চাল নামে পরিচিত বালুরঘাটে। এই চালের দাম ছিল কেজি প্রতি ৬০ টাকা। এক লাফে বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৭৫ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন