প্রচুর আলু নষ্টের আশঙ্কা উত্তর জুড়ে

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, শুধু কোচবিহারেই প্রায় তিরিশ হাজার প্যাকেট আলু বাইরে ফেলা হয়েছে। ধূপগুড়ি-ফালাকাটা মিলিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গে এক লক্ষ প্যাকেট ছাড়িয়ে যাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার ও ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৯
Share:

জমা: হিমঘরের বাইরে আলুর পাহাড়। দিনহাটায়। ছবি: সুমন মণ্ডল

মেয়াদ শেষ। তাই আপাতত হিমঘরেই বাইরেই পড়ে রয়েছে অন্ততপক্ষে এক লক্ষ প্যাকেট আলু। আশঙ্কা, দিন কয়েকের মধ্যে ওই পচা আলুর জায়গা হবে রাস্তায়। কিছু গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হলেও বাকিটা কার্যত নষ্টই হবে।

Advertisement

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, শুধু কোচবিহারেই প্রায় তিরিশ হাজার প্যাকেট আলু বাইরে ফেলা হয়েছে। ধূপগুড়ি-ফালাকাটা মিলিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গে এক লক্ষ প্যাকেট ছাড়িয়ে যাবে। হিমঘর মালিকেরা জানান, বাইরে বেশিদিন আলু রাখা সম্ভব নয়। ওই আলু দিন দু-তিনেকের মধ্যে নষ্ট হতে শুরু করবে। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম সদস্য জগদীশ সরকার বলেন, ‘‘সরকার হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা বাড়ালেও আলুর দর ওঠেনি। যে আলু আমরা ৯ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে কিনেছিলাম, সেই আলু এখন আমাদের কুড়ি পয়সা কেজি দরে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। তা নিয়ে কী হবে?” উত্তরবঙ্গ হিমঘর মালিক সমিতির সদস্য, দিনহাটার একটি হিমঘরের মালিক মানিক বৈদ বলেন, “আমার এখানে প্রায় পাঁচ হাজার প্যাকেট আলু রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে। তা বিক্রি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।”

ধূপগুড়ি-ফালাকাটা থেকে শুরু করে কোচবহার আলু উৎপাদনের দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে। এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ আলু চাষের উপরে নির্ভরশীল। আলুর ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন বহু মানুষ। আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় তাই আশঙ্কা বেড়েছে। আলু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, নতুন আলু বাজারে ওঠা অবস্থাতেও পুরনো আলু থেকে যায় হিমঘরে। সেই সময় থেকে ওই আলুর দাম পড়তে শুরু করে। পাইকারি ১ থেকে ২ টাকায় আলুর দাম নেমে যাওয়ায় কেউই আর আলু নিতে হিমঘরমুখী হয়নি। তাতে লোকসানের মুখে পড়তে হয় হিমঘর মালিকদেরও।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ আলু হিমঘর সমিতির অন্যতম সদস্য গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধূপগুড়ি ও ফালাকাটার হিমঘরগুলি থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যেই বেশিরভাগ আলু বেরিয়ে গিয়েছে। কিছু আলু যা এখনও পড়ে আছে তা আর বের করবেন না ব্যবসায়ীরা। হিমঘরের ভাড়া মেটানোর ভয়ে তারা আর ওই আলু বের করতে চান না।”

আলুর বাজার দর নেমে যাওয়ায় রাজ্য সরকার এ বছর হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করার নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশ অনুযায়ী হিমঘরে আলু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনও ভাড়া দিতে হয় নি। কিন্তু ওই সময়ের পরও যারা হিমঘরে আলু রেখেছেন তাঁদের আলু বের করতে হলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে। দিনহাটার ব্যবসায়ী মালেকুর রহমান বলেন, “আলুর দাম নেই। তাই হিমঘর থেকে আলু আনা মানে আবার খরচের মধ্যে পড়া।’’

আলুর বাজার মার খাওয়ায় চিন্তায় রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কগুলি। কারণ আলুর মরসুমে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্কগুলি থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেন। ফলে ধারের টাকা কীভাবে তাঁরা পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল কো অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান কমল রায় বলেন, “ব্যবসায়ীরা যারা প্রচুর টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ধার করে আলু হিমঘরে মজুত করেছিলেন, তাঁরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। সময়মত তারা ধারের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে ব্যাঙ্কও আগামীদিনে ওই ব্যবসায়ীদের ঋণ দেবে না। ফলে আলু ব্যবসার ওপরেই এই ঘটনার বড় প্রভাব পড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন