আরও বাগান বন্ধের আশঙ্কা

শ্রমিক নেতাদের দাবি, শীতকালে চা বাগানে উৎপাদন বন্ধ থাকে। এই সময় বাগান পরিচর্যার কাজ হয়। চা শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একাংশের অভিযোগ, শীতের মরসুমে বাগান বন্ধ রেখে শ্রমিকদের বেতন বাবদ বাড়তি টাকা খরচ বাঁচাতে চায় মালিকরা।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪২
Share:

হতাশ: মুজনাই চা বাগানের সামনে শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র

দুই বাগানে কাজ বন্ধের পরে আরও বাগানে কাজ বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শ্রমিক নেতারা।

Advertisement

শ্রমিক নেতাদের দাবি, শীতকালে চা বাগানে উৎপাদন বন্ধ থাকে। এই সময় বাগান পরিচর্যার কাজ হয়। চা শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একাংশের অভিযোগ, শীতের মরসুমে বাগান বন্ধ রেখে শ্রমিকদের বেতন বাবদ বাড়তি টাকা খরচ বাঁচাতে চায় মালিকরা। তাই এই সময় বাগান বন্ধ রাখতে তাঁরা ‘অজুহাত’ খোঁজেন বলে দাবি নেতাদের। চলতি বছর ‘উৎপাদন বৃদ্ধি’ সংক্রান্ত বৈঠকের নির্দেশিকাকে হাতিয়ার করে মালিকপক্ষের একাংশ বাগান বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেই অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের। বুধবার কাজ বন্ধের নোটিস দিয়ে বাগান ছাড়েন ডুয়ার্সের চেংমারি ও মুজনাই বাগানের কর্তৃপক্ষ। হতাশ সেখানকার শ্রমিকেরা। এর পরে আরও কয়েকটি বাগান বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা শ্রমিক নেতাদের।

২৯টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথমঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের নেতা সমন পাঠক বলেন, ‘‘বৈঠকের সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে মালিকরা শ্রমিকদের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন। তাঁরা চাইছেন শ্রমিকরা যাতে আন্দোলন শুরু করে। কোথাও কোথাও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে বাগান বন্ধ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষ। এই মুহূর্তে তরাই, ডুয়ার্স ও পাহাড়ের অনেক বাগানেই শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে।’’ ১৫ নভেম্বর রাজ্য শ্রম দফতরের উদ্যোগে কলকাতায় চা বাগানের উৎপাদন বৃদ্ধি সংক্রান্ত ওই বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে চাপানউতোর ক্রমেই বাড়ছে। বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও শ্রম কমিশনার তাঁর ইচ্ছা মতন সিদ্ধান্ত লিখে নির্দেশিকা হিসাবে প্রতিলিপি সকলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ মানতে নারাজ মালিক সংগঠনের নেতারা। তাদের বক্তব্য তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেননি।

Advertisement

তরাই সংগ্রামী চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে কোনও বাগানে গেট মিটিং করা যাবে না। ১৫০ বছর ধরে বাগানে যে নিয়মে কাজ হয়ে আসছে সেই নিয়মের পরিবর্তন করতে চাইছে রাজ্য সরকার। বেছে বেছে শীতকালেই সেইসব নিয়ম লাগু করতে চাপ তৈরি হচ্ছে। ওই চাপ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামবে। মালিকরা সেটাই চাইছে।’’ ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ প্ল্যানটেশন ওয়ার্কার্সের কেন্দ্রীয় সভাপতি অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে মালিকদের একাংশের যোগসাজশে পরিকল্পনামাফিক কাজ হচ্ছে। তাই শীতের কিছুদিন আগেই উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।’’ তৃণমূল নেতা তথা রাজ্য সরকার গঠিত টি অ্যাডভাইসারি কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য মোহন শর্মা বলেন, ‘‘কিছু মালিকপক্ষ শীতের সময় টাকা বাঁচাতে দুই মাসের জন্য বাগান বন্ধ করে চলে যাবে। আর শীত শেষ হতেই ফের বাগান খুলবে। দীর্ঘদিন থেকে চলতে থাকা সেই ব্যবস্থায় আমরা পরিবর্তন আনব।’’

তবে উৎপাদন বৃদ্ধির বৈঠকে শ্রমিক বিরোধী কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মানতে নারাজ রাজ্যের যুগ্ম শ্রম কমিশনার এবং শ্রমমন্ত্রীর পরামর্শদাতা পশুপতি ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘যা যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রমিক সংগঠনগুলির মতামত নেওয়া হয়েছে। কোন সিদ্ধান্তই শ্রমিক বিরোধী নয়।’’ বাগান মালিক সংগঠন টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার তরাই শাখার সচিব সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও মালিকপক্ষই ইচ্ছে করে বাগান বন্ধ করতে চায় না। আইনে যেভাবে বলা হয়েছে আমরা চাই সেভাবেই শ্রমিকরা কাজ করুক। কোনও বাড়তি দাবি কোনও ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন