মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা চত্ত্বরে পুলিশ আবাসনে চুরির ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। থানার ভিতরে পুলিশের ঘরেই চুরির কিনারা না হওয়ায় পুলিশকর্মীদের একাংশের মধ্যেও আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এসআই বিপ্লব ভট্টাচার্য়ের খালি আবাসনে ঢুকে ন’লক্ষ টাকা ও অলঙ্কার চুরি করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবাসনে ফিরে চুরির ঘটনার কথা জানতে পারেন বিপ্লববাবুর স্ত্রী। থানার ভিতরে আবাসনের নিরাপত্তা দিতেই যেখানে পুলিশ ব্যর্থ, সেক্ষেত্রে এলাকার নিরাপত্তার হাল কি হতে পারে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাধারণ বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন এলাকার বিধায়কও। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
গত বছর হরিশ্চন্দ্রপুর থানা থেকে হবিবপুরে বদলি হয়ে যান এসআই বিপ্লব ভট্টাচার্য। তিনি বদলি হলেও ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে আবাসনে থাকতেন তার স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী। সঙ্গে থাকতেন পূর্ণিমাদেবীর বছর ছাব্বিশের ভাইপো বিভাস চক্রবর্তী। গত শনিবার পূর্ণিমাদেবী আবাসনে তালা দিয়ে হবিবপুরে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর চুরির ঘটনাটি তাদের নজরে আসে। একটি জমি বিক্রি করে অন্য একটি জমি কেনার জন্য ৯ লক্ষ টাকা লকারে রেখে গিয়েছিলেন পূর্ণিমাদেবী। সেই টাকা ছাড়াও অলঙ্কার সহ কিছু পোষাকও চুরি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। এদিন রাতেই পুলিশে অভিযোগ জানান তাঁরা।
কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পরেও পুলিশ ঘটনার তদন্তই শুরু করেনি বলে পুলিশকর্মীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, জমি বিক্রি করে যে ন’লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছিল, রাতেই সেই তথ্য পুলিশকে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও আবাসনে এসে পরিবারের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ বা কোনও তদন্ত শুরু করেনি পুলিশ।
এসআই বিপ্লববাবু অবশ্য এদিন ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ঘটনার জেরে ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘কোথা থেকে টাকা পাওয়া গিয়েছে সব তথ্যই আমাদের তরফে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের কেউই এখনও ধরা পড়ল না।’’
এদিকে থানা চত্ত্বরে চুরি রুখতেই পুলিশ যেখানে ব্যর্থ সেক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের ধরা পড়া নিয়েও সংশয় যাচ্ছে না ব্যবসায়ী সহ বাসিন্দাদের। হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক তজমূল হোসেন বলেন, ‘‘থানা চত্ত্বরই যেখানে সুরক্ষিত নয়, সেখানে সাধারণ বাসিন্দাদের নিরাপত্তার হাল কি তা সহজেই অনুমান করা যায়।
থানার পিছনেই বাড়ি জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলমের। তিনিও বলেন, ‘‘কত টাকা চুরি হয়েছে সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু থানার ভিতরে যা ঘটল তার পরে আর পুলিশের উপর মানুষের কতটা আস্থা থাকবে জানি না।’’ হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি পবন পাশোয়ান বলেন, ‘‘থানার ভিতরে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারছি না। আমরা চাই, ওই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।’’