ফালাকাটায় ছাত্র খুনে ধৃত বাবা-মা

শুক্রবার দুপুরে ফালাকাটার বাড়ি থেকে তাঁকে যখন প্রতিবেশীরা উদ্ধার করেন, শুভদীপের সারা গায়ে কালশিটের দাগ ছিল। এ দিন দুপুরে বাথরুমের সামনে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মুখের পাশে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:১৩
Share:

শুভদীপ দে

একাদশ শ্রেণির ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তাঁর বাবা ও সৎ মা-কে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁর নাম শুভদীপ দে (১৭)। শুক্রবার দুপুরে ফালাকাটার বাড়ি থেকে তাঁকে যখন প্রতিবেশীরা উদ্ধার করেন, শুভদীপের সারা গায়ে কালশিটের দাগ ছিল। এ দিন দুপুরে বাথরুমের সামনে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মুখের পাশে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রতিবেশীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানা যায়, শুভদীপের আগেই মৃত্যু হয়েছে। শুভদীপের বাবা প্রসেনজিৎবাবু কোচবিহারের ফুলবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী।

Advertisement

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই ছাত্রের এক প্রতিবেশী অভিযোগ করেছেন, বাবা-মায়ের অত্যাচারেই শুভদীপের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে আমরা প্রথমে কথা বলেছি। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ শুভদীপের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী প্রসেনজিৎবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই মুহূর্তে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

ফালাকাটার আশুতোষপল্লির বাসিন্দা শুভদীপ মাধ্যমিকে স্টার নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন। ওই স্কুলেই একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তেন। ছোটবেলাতেই তাঁর মা মারা যান। তাঁর বাবা প্রসেনজিৎ দে তারপরে আবার বিয়ে করেন। তাঁদের প্রতিবেশীদের বক্তব্য, প্রসেনজিৎবাবু সস্ত্রীক বড় ছেলের উপরে অত্যাচার করতেন। কয়েকজন প্রতিবেশী তার প্রতিবাদও করেছেন আগে। ছেলেকে পেট ভরে খেতেও দেওয়া হত না বলে অভিযোগ। তখন প্রসেনজিৎবাবুর স্ত্রী তাঁদের বলতেন, ‘‘নিজের ছেলেকে শাসনও করতে পারব না?’’ সেই কথা শুনে তারপর থেকে আর কেউ সাধারণত এগোতেন না। কিন্তু এ দিন সকালে শুভদীপের কান্নার শব্দ শুনতে পেয়েই তাঁরা সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন। পরে শুভদীপকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

শুভদীপের বন্ধু সোহম বণিক বলেন, ‘‘আমাদের কাছেও শুভদীপ মায়ের অত্যাচারের কথা বলত। ২৫ নভেম্বর আমাদের সঙ্গে শুভদীপেরও সুন্দরবন যাওয়ার কথা ছিল।’’ বাবা-মায়ের অত্যাচারেই শুভদীপের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন দে পরিবারের প্রতিবেশী বিকাশ দাস।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক দিন ধরে শুভদীপ পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। ডাক্তার আলট্রাসোনোগ্রাফিও করতে বলেছিলেন। কিন্তু বাবা-মা ছেলের চিকিৎসায় কোনও সাহায্য করতে রাজি হননি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। প্রতিবেশী কমল বণিক বলেন, ‘‘আমরা এ দিন দুপুরে এই ঘটনা জানতে পারি। মায়ের নির্মম অত্যাচারেই এই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরে ওই মহিলা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন। আমরাই আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন