বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ধরা হচ্ছে নদীয়ালি মাছ

ময়নাগুড়ির জলঢাকা নদী লাগোয়া এলাকার মৎস্যজীবী সুকু দাস, বাণেশ্বর দাস, ফলিন রায়, দয়াল রায়রা জানান, জলঢাকা নদীতে সারা বছর মাছ শিকার করে সংসার চলে। কিন্তু ইদানীং কিছু চোরাশিকারি ইনভার্টার দিয়ে মাছ মেরে ফেলছে।

Advertisement

অর্ণব সাহা

ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১১
Share:

শিকার: ডুয়ার্সের বিভিন্ন নদীতে এ ভাবেই ইনভার্টার চালিয়ে বিদ্যুৎ দিয়ে ধরা হয় মাছ। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

ধূপগুড়ি, ফালাকাটা ও ময়নাগুড়ির বিভিন্ন নদীতে ইনভার্টার চালিয়ে, ব্যাটারিবাহিত বিদ্যুৎ দিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, এ ভাবে মাছ শিকারের জেরে বহু প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষত নদীয়ালি মাছের মধ্যে বোরলি, চ্যালা, চেপটি, চাঁদা মাছ বিপন্নের তালিকায় চলে গিয়েছে। মাছেদের পাশাপাশি সাপ, ব্যাঙ এবং অন্য জলজ প্রাণীরাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

ময়নাগুড়ির জলঢাকা নদী লাগোয়া এলাকার মৎস্যজীবী সুকু দাস, বাণেশ্বর দাস, ফলিন রায়, দয়াল রায়রা জানান, জলঢাকা নদীতে সারা বছর মাছ শিকার করে সংসার চলে। কিন্তু ইদানীং কিছু চোরাশিকারি ইনভার্টার দিয়ে মাছ মেরে ফেলছে। আগে বিষ তেল দিয়ে মারত। এখন রোজ সকালে নদীর পারে গিয়ে দেখা যায় তার বিছিয়ে বিদ্যুৎ চালিয়ে মাছ মারা হচ্ছে। দেখার কেউ নেই।’’ তা ছাড়া, জলে নামতে গিয়ে বিছিয়ে রাখা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এর আগে একাধিক বার দুর্ঘটনার মুখেও পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

একই ঘটনা ঘটছে ফালাকাটার মুজনাই, সাপটানা, কিংবা ধূপগুড়ির গিলান্ডি, ডুডুয়া নদীতেও। ঠিক কেমন এই শিকারের পদ্ধতি?

Advertisement

স্থানীয় মৎসজীবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রথমে দু’টি লম্বা বাঁশ জোগাড় করতে হয়। তার পরে ওই বাঁশ দু’টির মাথায় লোহার রড লাগিয়ে সেই রডের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় বিদ্যুতের তার। তারের অপর প্রান্তে যুক্ত থাকে ব্যাটারি। নদীতে কোনও জায়গায় মাছ দেখামাত্রই নেগেটিভ ও পজেটিভ তার দু’টি ওই জায়গায় লম্বা বাঁশের সাহায্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার মাছগুলি নদীতে ভেসে ওঠে। তা ধরে ফেলেন মৎসজীবীরা। কেউ কেউ আবার ব্যাটারির বদলে বিদ্যুতের হাইটেনশন তার থেকে হুকিং করে সেই বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে দেয় নদীতে।

আলিপুরদুয়ারের জেলা মৎস্য আধিকারিক সুনীলচন্দ্র বর্মন বলেন, “অনেক দিন ধরেই ডুয়ার্সের নদীগুলিতে দেখা মিলছে না মহাশোল, সরপুঁটি বা ছোট ভেটকির মতো নদীয়ালি মাছের, বিষয়টি উদ্বেগের। তা ছাড়া কমে আসছে বোরলি, পুঁটি, পয়া, গুচি, চ্যাং-সহ নানা প্রজাতির মাছ। বিষয়টি রাজ্য মৎস্য দফতরকেও জানানো হয়েছে। নদীয়ালি মাছ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন রয়েছে মাস্টার প্ল্যানের।’’

পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে নদীয়ালি মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাবে। বন দফতর, প্রশাসন, পুলিশের দেখা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন