নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পাহাড়ও নামল পথে

লেপচা থেকে শেরপা, দামাই থেকে মঙর, রবিবার সাত সকালে ছুটির দিনে দার্জিলিং শহরের রাস্তায় হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেমে এলেন ১৪টি জনজাতির কয়েক হাজার মানুষ।

Advertisement

স্বরূপ সরকার

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৪
Share:

বিক্ষোভে: নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র

লেপচা থেকে শেরপা, দামাই থেকে মঙর, রবিবার সাত সকালে ছুটির দিনে দার্জিলিং শহরের রাস্তায় হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেমে এলেন ১৪টি জনজাতির কয়েক হাজার মানুষ। নাগরিকপঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠল। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পাহাড়ে নাগরিকত্ব আইন লাগু করতে দেওয়া হবে না বলে বোর্ডের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানকে সমর্থন করে তৃণমূলের মিছিলেও গোর্খাদের শামিল হওয়ার আহ্বান করা হল। প্রতিবাদ মিছিলের পরে ম্যাল চৌরাস্তায় জমায়েত, সভার পর ১৪টি বোর্ডের কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে দার্জিলিঙের জেলাশাসক দীপাপ প্রিয়াকে একটি স্মারকলিপি দিয়ে জানানো হল, নাগরিকপঞ্জি বা নাগরিকত্ব আইনের জন্য পাহাড়ের অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

Advertisement

বোর্ডগুলির কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে লেপচা বোর্ডের চেয়ারম্যান লামসাং তামসাং বলেন, ‘‘পাহাড়ে শান্তি রয়েছে। শান্তি না থাকলে উন্নয়নের কাজ হবে না। আমাদের পাহাড়বাসীর কোনও উন্নতি হবে না। কিন্তু যে আইন আনা হয়েছে, তাতে পাহাড়ের পরিবেশ খারাপ হতে পারে।’’ তিনি জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পাশে আছেন।

চলতি সপ্তাহেই সংসদে নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়েছে। তার পরেই পাহাড়ের বিনয় তামাং, অনীত থাপারা তার বিরোধিতায় আন্দোলনের নামার কথা ঘোষণা করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মি‌ছিল, সভার ডাক হয়েছে। নারী মোর্চার নেত্রী ছিরিং দাহাল, গত শনিবার জানিয়ে দিয়েছেন, নাগরিকত্ব আইন কোনওভাবে করতে দেওয়া হবে না। মহিলা মোর্চার সদস্যরা রাস্তায় নেমে প্রয়োজনে তা রুখবেন। পাহাড় যখন ধীরে ধীরে বি‌ষয়টি নিয়ে ফুঁসতে শুরু করেছে, তখনই রবিবার রাস্তায় নেমে পড়লেন জনজাতি বোর্ডের সদস্যরা।

Advertisement

সকাল ১১টা নাগাদ দার্জিলিং স্টেশন থেকে চকবাজার হয়ে ম্যাল চৌরাস্তা অবধি মিছিল হয়। তার পরেই সেখানে সভা করেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। শেরপা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিমা ওয়াংদি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের ভোটাধিকার, নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের উদ্ধাস্তু, শরণার্থী তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমরা পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সের জনজাতিদের উচ্ছেদের এই চক্রান্ত আমরা মানব না।’’

উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের সময় নাগরিকত্ব আইন বা নাগরিকপঞ্জি নিয়ে গোর্খাদের কোনও সমস্যা হবে না বললেও সম্প্রতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। লোকসভায় দাঁড়িয়ে এই আইনের জন্য অসমের গোর্খারা দুর্দশায় পড়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। এর জেরে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে একই ভাবে বাসিন্দারা ধীরে ধীরে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বলেও প্রকাশ্যে না হলেও মানছেন জেলার বিজেপির নেতারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন