দিদি রাখি, না মোদী রাখি! জোর টক্কর শুরু মালদহ জুড়ে

চিত্তরঞ্জন মার্কেটের এক প্রবীণ বিক্রেতা সঞ্জয় ঘোষ বললেন, ‘‘সেটা হতে পারে। তবে সাধারণ মানুষও তো রাজনীতির চর্চা করেন। তাঁরা অনেকেই এই দুই নেতার রাজনৈতিক টক্কর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই রাখি কিনতে গিয়েও হয়তো তাঁদের মধ্যে ওই বোধটা কাজ করছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

মালদহ শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৪৭
Share:

পাশাপাশি: মালদহের বাজারে মিলছে এই রকম রাখি। —নিজস্ব চিত্র

দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে একজন চিৎকার করে ক্রেতাদের ডাকছেন, ‘‘নিয়ে যান, নিয়ে যান, ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’, নরেন্দ্র মোদী রাখি!’’ তিন-চারবার হাঁক দেওয়ার পর আবার তিনিই বলতে শুরু করেছেন, ‘‘নিয়ে যান, নিয়ে যান মমতাদিদি রাখি! মুখ্যমন্ত্রী রাখি!’’

Advertisement

একই দোকান। পাশাপাশি, বিক্রি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের ছবি দেওয়া রংবেরঙের রাখি। আর তিনদিন পরেই রাখি পূর্ণিমা। তার আগে মালদহ জেলা সদরের প্রতিটি বাজারে শুরু হয়েছে রাখির বাজার। আর এই বাজারে এবার কোন রাখি বেশি বিক্রি হবে, তার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে শহরের নেতাজি পুরবাজার, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মার্কেট, কাজি আজাহারউদ্দিন মার্কেট, গৌড় রোড মার্কেট, রাজমহল রোড, নেতাজি সুভাষ রোড— সর্বত্র। রাখির বাজারে এবার নতুন আকর্ষণ হল মোদী ও দিদি রাখি! এই টক্করে মজেছেন সাধারণ ক্রেতারাও। অনেকেই পছন্দের নেতা বা নেত্রীর ছবিওয়ালা রাখি কিনছেন। অনেকেই হয়তো রাজনীতির ধারেকাছে যান না। তবু একটা কৌতূহলে বা মজার ছলেই কিনে ফেলছেন এমন রাখি। নেতাজি পুরবাজারের এক রাখি বিক্রেতা ভুবনচন্দ্র দাস বললেন, ‘‘কয়েকদিন আগেই বাজারে চলে এসেছে মোদী ও মমতা রাখি। অন্যান্য আইটেমের রাখি থাকলেও মানুষের মধ্যে চাহিদা বেশি করে দেখা যাচ্ছে দুই নেতা-নেত্রীর রাখি কেনার। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে মানুষ এই রাখি কিনছেন।’’ কোন রাখির বিক্রি বেশি? বিক্রেতার জবাব, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা বিক্রি করেছি, তাতে দু’জনেই সমানে সমানে টক্কর দিয়ে চলেছেন। বাকি তিনদিনে কার পাল্লা ভারী হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।’’

দুই নেতার রাজনৈতির লড়াইয়ের জন্যই কি এই নতুন ধরনের রাখির এমন আকর্ষণ? চিত্তরঞ্জন মার্কেটের এক প্রবীণ বিক্রেতা সঞ্জয় ঘোষ বললেন, ‘‘সেটা হতে পারে। তবে সাধারণ মানুষও তো রাজনীতির চর্চা করেন। তাঁরা অনেকেই এই দুই নেতার রাজনৈতিক টক্কর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই রাখি কিনতে গিয়েও হয়তো তাঁদের মধ্যে ওই বোধটা কাজ করছে।’’ তবে তিন ও আরও কয়েকজন বিক্রেতা জানালেন, দুই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও দেদার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের নেতা বা নেত্রীর ছবিওয়ালা রাখি। কারণ জনসংযোগের কাজে এটা একটা বড় অস্ত্র বলে তাঁরাও মনে করছেন। খবর নিয়ে জানা গেল, বিজেপি ও তৃণমূল— দুই দলেরই জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে কর্মী-সমর্থকেরাও তাঁদের নেতা-নেত্রীর ছবি দেওয়া রাখি কিনে এখন থেকেই জমাতে শুরু করেছেন। দুই দলের সূত্রেই খবর, রাখি পূর্ণিমার দিন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের সাধারণ মানুষদের হাতে রাখি পরিয়ে প্রচারে নিজেদের ব্যস্ত রাখবেন বিজেপি,

Advertisement

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা।

ইংরেজবাজার পুরসভার উপ-পুরপ্রধান তথা জেলা তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার বলেন, “রাখিতে নেত্রীর ছবি নিয়ে উন্মাদনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নেত্রীর দলের সৈনিক হিসাবে আমরা গর্বিত। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথীর মতো প্রকল্প ছাত্রছাত্রীদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে আরও জনপ্রিয় করেছে। তারই প্রভাব পড়েছে রাখির বাজারে।’’ বিজেপির জেলা সহকারী সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী এতটাই জনপ্রিয় যে এবারেও মানুষের আশীর্বাদ তিনি পেয়েছেন ও ফের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার এই জনপ্রিয়তার প্রভাব রাখির বাজারে পড়বে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন