রাতের শহর

বাসস্টপে টোটোয় ওরা কারা

হায়দরাবাদের ঘটনা রাতের জলপাইগুড়ি নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর)  শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও ইলওয়াড যদিও বলেন, “জলপাইগুড়ির নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সর্বত্র নজরদারি চলে।”

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬
Share:

কতটা নিরাপদ: জলপাইগুড়ির পথে। ছবি: সন্দীপ পাল

অন্ধকার ততটা নয়। কুয়াশায় পথবাতি ঢেকে যাওয়ায় আলো-আধারি তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়ির শান্তিপাড়ায়। এখানেই কিছু আগে থেমেছে শিলিগুড়ি থেকে ফেরা রাতের শেষ সরকারি বাসটি। ঘড়ির কাঁটা রাত এগারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়কের যানজটে বাস পৌঁছেছে দেরিতে। ডিপো জনশূন্য। বাসের বেশিরভাগ যাত্রী আগেই নেমে গিয়েছেন। পিঠে ব্যাগ নিয়ে দুই তরুণী টোটোর অপেক্ষায়। টোটো এসে দাঁড়াল, চালক এক যুবক। চালকের আসনের পাশে আরও এক যুবক বসে। তার এক হাত চালকের কাঁধে। তরুণীদের টোটোতে বসতে বলছেন দুই যুবকই। ভাড়া কম নিয়ে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। তরুণী দু’জন প্রত্যাখ্যান করছেন। টোটোয় বসা দুই যুবক নাছোড়। বিরক্ত হয়ে দুই তরুণী হাঁটতে শুরু করলে টোটোটি পিছু নেয়। এক তরুণী ঘুরে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে পুলিশ ডাকার হুমকি দেন। অশ্রাব্য গালি দিয়ে চলে যান দুই যুবক।

Advertisement

কাছে গিয়ে পরিচয় দিতে তরুণীদের একজন বলেন, “দেখলেন কাণ্ডটা! পুলিশ ডাকার হুমকিটা দেওয়া ছাড়া আমাদের উপায়ই ছিল না। ওরা যদি ভয় না পেয়ে আমাদের সঙ্গে অসভ্যতা করত, পুলিশ ডাকতে ডাকতে তো যা হওয়ার হয়েই যেত।” আর এক তরুণীর বক্তব্য, “পুলিশকে ডাকতে হবে কেন? পুলিশকে নিজে থেকে দেখবে না কেন?”

শুক্রবার রাত এগারোটার শান্তিপাড়ার ঘটনা। কদমতলা মোড়ও সুনসান। আশপাশের কয়েকটি শপিং মল থেকে বের হওয়া তরুণী-যুবতীরা দল বেঁধে যাচ্ছেন। সেখানেও পুলিশের নজরদারি দেখা গেল না। হায়দরাবাদের ঘটনার পরদিনই মালদহের আমবাগানে এক তরুণীর দগ্ধ দেহ মেলে। তার পরেই আতঙ্ক বাড়ে জলপাইগুড়ির মনেও।

Advertisement

অনেকেই বলছেন, শহরের যেগুলি ব্যস্ত এলাকা, রাতের অন্ধকারে সে সব জায়গায় নির্জন অন্ধকার নেমে আসে সেখানে। জেলাশাসকের দফতরের পিছনের বাঁধ কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে দু’পাশে আলো লাগানো হয়েছিল। একটি আলোও জ্বলে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে বাঁধটি। সকালে মদের ফাঁকা বোতল-গ্লাস উদ্ধার হয় রোজ, মেলে নেশার ওষুধের ছেঁড়া স্ট্র্যাপও। কিলোমিটার খানেক অন্ধকারে ডুবে থাকা রাস্তায় যে কোনও দিন বড়সর বিপদ ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা আশেপাশের বাসিন্দাদের। ওই এলাকা থেকেই এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল সে বারও। তার পরেও প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি, বলছেন বাসিন্দারাই।

হায়দরাবাদের ঘটনা রাতের জলপাইগুড়ি নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও ইলওয়াড যদিও বলেন, “জলপাইগুড়ির নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সর্বত্র নজরদারি চলে।”

তাই কী? জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন লাগোয়া এলাকায় সন্ধ্যের পরেই নেশার আড্ডা শুরু হয়। শনিবার সন্ধ্যেয় হলদিবাড়ি প্যাসেঞ্জার থেকে নেমে এক যুবতী দু’নম্বর গুমটির দিকে এগোচ্ছিলেন। সামনে রাস্তা আটকে নেশাগ্রস্ত কয়েক জন যুবক হল্লা করছেন। দেখে তরুণী বাইরে পা বাড়ালেন না। স্টেশনের দিকে ফিরে গেলেন। ওই যুবতীর কথায়, “পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, যুবকরা সবাই নেশাগ্রস্ত। খারাপ কথা বলছে, রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গেলে বোধহয় ছেঁকে ধরত। পুলিশকে এই সব জায়গাতেই দেখা যায় না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন