কুয়াশা মোড়া রাতে রক্ষীর চোখ সরলেই কেল্লা ফতে

সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেক সময় প্রকাশ্যেই সে সব উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। শীতের রাতের কুয়াশা ওই কারবারীদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৮
Share:

কাঁটাতার নেই। খোলা রাস্তায় টহলই ভরসা। নিজস্ব চিত্র

কখনও হেঁটে পেরোচ্ছে গরু। কখনও উড়ে পার হচ্ছে সোনা। তার মধ্যে সুযোগ পেলেই ফাঁক গলে ঢুকে পড়ছে মানুষ। হেঁটে হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে এসে ভোটার কার্ড নিয়ে পাল্টে ফেলছে পরিচয়। কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তে এখন এই চিত্রের অভিযোগ উঠছে ভুরিভুরি।

Advertisement

সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেক সময় প্রকাশ্যেই সে সব উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। শীতের রাতের কুয়াশা ওই কারবারীদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিএসএফের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, সীমান্তের নজরদাড়িতে কোথাও কোনও খামতি নেই। প্রায় প্রতিদিন পাচার হওয়ার পথে গরু আটক করছেন তাঁরা। কোচবিহার রেঞ্জের বিএসএফের ডিআইজি সিএল বেলওয়া বলেন, “কড়া নজরদারি রয়েছে। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই আটক করা হচ্ছে।” জেলা পুলিশের এক কর্তাও জানান, জেলার ভিতরে নজরদারি রাখছেন তাঁরাও।

কোচবিহারের পাঁচশো তিরিশ কিলোমিটার সীমান্তে আসলে নজরদারি কেমন? বিএসএফ সূত্রের খবব, প্রায় সীমান্তের পুরো অংশই কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। সেই অংশ দিয়ে চোরাচালান কঠিন ব্যাপার। কিন্তু তাঁর বাইরে বেশ কয়েক কিলোমিটার রয়েছে যেগুলিতে কাঁটাতার নেই। তার মধ্যে কিছুটা অংশ নদীপথ। কাঁটাতারবিহীন অংশ যেমন রয়েছে নাজিরহাট, গীতালদহের সীমান্তে তেমনই মেখলিগঞ্জেও এমন সীমান্ত রয়েছে। ওই অংশ দিয়েই চোরাকারবারের দৌরাত্ম্য চরমে উঠেছে। রাতের অন্ধকারে ওইঅংশ পাহাড়া দিতে কালঘাম ছুটে যায় বিএসএফের। চোখ এদিক থেকে ওদিক হলেই ‘কেল্লা ফতে’।

Advertisement

শয়ে শয়ে গরু ঢুকতে শুরু করে ওপারে। আসলে চোরাকারবারীরা বেশিরভাগ স্থানীয়। সেই সুযোগে সীমান্তের ‘ইতিহাস, ভূগোল’ তাঁদের হাতের তালুর মতো চেনা। রাত হলেই সেই সব অন্ধকার পথেই আনাগোনা শুরু হয়।

বিএসএফকে বিভ্রান্ত করতে চোরাকারবারীরা ঢিল ছোঁড়াছুড়ি করে বলেও অভিযোগ। দিন কয়েকের মধ্যেই গীতালদহ থেকে নাজিরহাট, মেখলিগঞ্জ সমস্ত সীমান্ত থেকেই গরু আটক করেছে বিএসএফ। কয়েকদিন আগেই চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে কোটি টাকার সোনার বিস্কুট সহ একজনকে গ্রেফতার করে শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা। বহু আগে দিনহাটা সীমান্ত থেকে সোনা উদ্ধার হয়। সম্প্রতি কলকাতায় বাংলাদেশি সন্দেহে রাকিব আলি নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই যুবক তুফানগঞ্জের অন্দরান-ফুলবাড়ির বাসিন্দা বলে দাবি করেছে। ভোটার পরিচয়পত্র রয়েছে তাঁর। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওপার থেকে এসে ভোটার পরিচয় তৈরি এবং ভোটার তালিকায় নাম তোলে ওই যুবক। সব খতিয়ে দেখতেই তদন্ত চলছে। কয়েক বছর আগে দিনহাটার শুকারুরকুঠিতে নকল ভোটার পরিচয়পত্র তৈরির একটি চক্র ধরা পড়েছিল। বিএসএফের এক আধিকারিকের কথায়, “শীতের শুরু থেকেই নজরদাড়ি আরও কড়া করা হয়েছে। কুয়াশার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে কারবারীরা। কিন্তু কোনও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement