সরকারি বাসের ধাক্কায় সাইকেল আরোহী এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল। মঙ্গলবার সকাল ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জের কুলিক সেতু সংলগ্ন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর নাম সোনালি সরকার (১৪)। তার বাড়ি স্থানীয় কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন মনিপাড়া এলাকায়।
এ দিন নবম শ্রেণির ছাত্রী সোনালি তার বোন বর্ণালীকে সাইকেলে চাপিয়ে টিউশন নিতে বাড়ি থেকে রায়গঞ্জের মিলনপাড়ায় যাচ্ছিল। সেই সময় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ধলগাঁ থেকে রায়গঞ্জগামী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের সাইকেলের পিছনে গিয়ে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়।
সোনালি ও বর্নালী রাস্তার উপর ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই সোনালির মৃত্যু হয়। বাসিন্দারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ণালীকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থায় অবনতি হওয়ায় চিকিত্সকেরা পরে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করেন। এরপরেই স্থানীয় বাসিন্দারা সোনালির মৃতদেহ আটকে কুলিক সেতু সংলগ্ন জাতীয় সড়ক মেরামতি ও যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে পথ অবরোধ শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের তরফে শঙ্কর সরকার, বাবু দাস, রামচন্দ্র ঘোষের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে কুলিক সেতু সংলগ্ন জাতীয় সড়কের একাংশ বেহাল। সেখানে অসংখ্য ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বেহাল জাতীয় সড়ক ও যান নিয়ন্ত্রণের অভাবের জেরেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা নাগাদ রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক থেন্ডুপ নামগিয়েল শেরপা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবিলম্বে জাতীয় সড়ক মেরামতি ও যান নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরুর আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
সোনালী রায়গঞ্জের মোহনবাটি পার্বতীদেবী বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ত। তার বোন বর্ণালী ওই স্কুলেরই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে সোনালির মৃত্যু ও মেজ মেয়ে বর্ণালীর জখম হওয়ার ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাদের বাবা-মা। সোনালির বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রী প্রদীপ সরকার ও মা ঝর্না সরকারের তিন বছরের আরেকটি মেয়ে রয়েছে।
অবরোধের পরে সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জেলাশাসক আয়েশা রানির দাবি, ‘‘জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে রূপাহার থেকে পূর্ণিয়া মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রশাসনের তরফে তাঁদেরকে দ্রুত সেই প্রক্রিয়া শেষ করে সড়ক মেরামতির অনুরোধ করা হয়েছে।’’
পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের দাবি, ‘‘ডিভাইডার বসিয়ে ও কিছু ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করে যান নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হচ্ছে। বাসটি চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’’