কোচবিহারে জামিন পেলেন না শুভজিৎ

দলীয় কর্মী খুনের চেষ্টায় মদত দেওয়ার অভিযোগে ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর শুভজিৎ কুণ্ডুকে পাঁচ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। বুধবার তাঁকে কোচবিহার সিজিএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ওই নির্দেশ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০২:২৭
Share:

আদালতের পথে শুভজিৎ কুণ্ডু। —নিজস্ব চিত্র।

দলীয় কর্মী খুনের চেষ্টায় মদত দেওয়ার অভিযোগে ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর শুভজিৎ কুণ্ডুকে পাঁচ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। বুধবার তাঁকে কোচবিহার সিজিএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ওই নির্দেশ দেন। এ দিনও তিনি জামিন না পাওয়ায় তাঁর সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সোমবার রাতে এল দাস মোড় লাগোয়া এলাকায় তৃণমূলের এক কর্মী দীপেশ লামা গুলিবিদ্ধ হয়। আরেকজনকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় মদতের অভিযোগে শুভজিৎবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দলীয় সূত্রের খবর, দীপেশবাবু স্থানীয় তৃণমূল নেতা অভিজিৎ দে ভৌমিকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। শুভজিৎবাবুর অনুগামীরা অভিজিৎবাবুদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে পাল্টা হামলার অভিযোগ জানান।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে, রাত নামলেই তৃণমূলের কিছু সমর্থক ও কর্মী সশস্ত্র অবস্থায় শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা দলেরই কোনও না কোনও নেতার ঘনিষ্ঠ। অভিযোগ, সে জন্য পুলিশকেও পরোয়া করছেন না তাঁরা। গুলি চালানোর ঘটনার পরেও মঙ্গলবার রাতে স্টেশন মোড়ে তৃণমূলের একটি পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। এল দাস মোড়ে একটি দোকানেও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। বেআইনি অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও। তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব জানিয়েছেন, গুলি চালানোর ঘটনায় যুক্ত অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে। তিনি বলেন, “দুটি মামলার তদন্ত হচ্ছে। শহরে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বরদাস্ত করা হবে না। ইতিমধ্যে একজন ডিএসপির নেতৃত্বে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের তালিকাও তৈরি হচ্ছে। লাগাতার অভিযান চালানো হবে।”

দলীয় সূত্রের খবর, এই দুই গোষ্ঠীর লড়াই শহরে নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই একাধিকবার দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে শহর উত্তপ্ত হয়। দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বোমা, গুলি চালানোর অভিযোগ আগেও একাধিকবার উঠেছিল।

Advertisement

অভিজিৎবাবু ছাত্র নেতা হিসেবে শহরে পরিচিত। কংগ্রেস রাজনীতিতে থাকার সময় অভিজৎবাবুরা প্রয়াত পুরপ্রধান বীরেন কুণ্ডুর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ওই দলে থাকার সময় থেকেই তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। পরে বীরেনবাবু তৃণমূলে যোগ দেন। কিছু দিন পর অভিজিৎবাবুরাও তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলেও দুই পক্ষের লড়াই জারি থাকে। শহরের কলেজগুলিতে এক সময় অভিজিৎবাবুদের একাধিকপত্য ছিল। তা ভাঙতে বীরেনবাবু আসরে নামেন। বীরেনবাবুর সঙ্গে তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবুর ঘনিষ্ঠতা ছিল। বীরেনবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে শুভজিৎবাবুও রবীন্দ্রনাথবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত হন।

গত পুরসভা নির্বাচনে শুভজিৎবাবু ভোটে জিতে কাউনন্সিলর হন। তাঁর মা রেবা দেবী পুরমাতা হন। সেই সময় গণ্ডগোলে কিছুটা কম ছিল। দলের অনেক নেতাই দাবি করেন, সেই সময় রাজনীতিতে অভিজিৎবাবুরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। দল সূত্রে খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে আবার দুই পক্ষের বিরোধ বেড়ে যায়। কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর সঙ্গে অভিজিৎবাবুদের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাওয়ায় দুই পক্ষই আবার শহরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের পরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। কয়েকজন জখম হন। পুলিশের কাছেও একাধিক অভিযোগ জমা হলেও সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কোনওদিন। এর পরিণতি হিসেবেই ওইদিন রাতে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “শুভজিৎবাবু ভাল ছেলে এটুকু বলতে পারি। এ ছাড়া বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। এর পিছনে কোনও চক্রান্ত থাকতে পারে। দলীয় স্তরে তদন্ত করে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেব।”

তবে স্টেশন মোড়ে তাঁদের কোনও দলীয় অফিস রয়েছে বলে রবীন্দ্রনাথবাবু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কোনও পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ আমি পাইনি। তবে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।” কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, “স্টেশন মোড়ে একটি পার্টি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাবে বার বার জানিয়েছেন দুষ্কৃতীরা কেউ পার পাবেন না। অপরাধ হলে প্রশাসন কঠোর হাতে ব্যবস্থা নেবে। কে কোন ঘটনায় জড়িত তা পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তবে একটি বিষয় দেখতে হবে যাতে একজন নির্দোষীও হেনস্থা না হন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন