কাঁচা পাতার দাম পড়ছে, বিপাকে চা চাষিরা

মরসুমের শুরুতে কাঁচা পাতার দাম কমতে শুরু করায় বিপাকে উত্তরবঙ্গের প্রায় চল্লিশ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি। তাঁদের অভিযোগ, বটলিফ কারখানার মালিকরা ইচ্ছে মতো প্রতিদিন পাতার দাম কমাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতীয় চা পর্ষদকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের হুমকি, পাতার দাম স্থিতিশীল করতে ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে ছোট বাগানগুলিতে উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০২:৩৪
Share:

মরসুমের শুরুতে কাঁচা পাতার দাম কমতে শুরু করায় বিপাকে উত্তরবঙ্গের প্রায় চল্লিশ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি। তাঁদের অভিযোগ, বটলিফ কারখানার মালিকরা ইচ্ছে মতো প্রতিদিন পাতার দাম কমাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতীয় চা পর্ষদকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের হুমকি, পাতার দাম স্থিতিশীল করতে ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে ছোট বাগানগুলিতে উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। যদিও বটলিফ কারখানার মালিকদের সংগঠনের তরফে চা চাষিদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, চায়ের বাজারে মন্দার জন্য কাঁচা পাতার দাম কমেছে। জটিলতা কাটাতে বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে ক্ষুদ্র চা চাষি এবং বটলিফ কারখানার মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে চা পর্ষদ।

Advertisement

ভারতীয় চা পর্ষদের সহকারী অধিকর্তা অমৃতা চক্রবর্তী বলেন, “পাতার দাম কিছুটা কমেছে। আগামী ৭ মে শিলিগুড়িতে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে ওই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে।”

ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগ, গত শুক্রবার থেকে পাতার দাম কমতে শুরু করে। ওই দিন ১৯ টাকা কেজি দামে বটলিফ কারখানায় চাষিরা পাতা বিক্রি করেছে। সোমবার সেটা কমে হয় ১৫ টাকা থেকে ১৩ টাকা কেজি। মঙ্গলবার ১২ টাকা থেকে ১০ টাকা কেজি দরে চাষিরা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, “মরশুমের শুরুতে বটলিফ কারখানার মালিকরা ইচ্ছে মতো পাতার দাম ঠিক করছেন। লোকসানের জেরে চা চাষের কাজে জড়িত প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন হলেও চা পর্ষদের কর্তারা নীরব দর্শক। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পাতার উৎপাদন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হবে।”

Advertisement

যদিও বটলিফ কারখানার মালিক সংগঠন চা চাষিদের ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, তৈরি চায়ের দাম কমে যাওয়ায় পাতার দাম কমেছে। তবে গুণমানে ভাল পাতার দাম বেশি আছে। মালিক সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জয় ধানুটিয়া বলেন, “গত মরসুমে তৈরি চায়ের দাম কমে যাওয়ায় প্রতিটি কারখানা ক্ষতির মুখে পড়ে। ওই ধাক্কা না সামলে উঠতে এবার ফের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে মরসুমের সবে শুরু। পাতার দাম বাড়বে।”

ক্ষুদ্র চা চাষিদের প্রশ্ন কবে পাতার দাম বাড়বে?

তাঁদের অভিযোগ, বটলিফ কারখানার মালিকরা ঠিক কথা বলছেন না। গত মরসুমে পুজোর আগে থেকে পাতার দাম নেমে ৫ টাকা কেজিতে দাঁড়ায়। আগাম কিছু না জানিয়ে এবার ফের একই পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক জানান, এক কেজি পাতা উৎপাদন করতে ১৩ টাকা খরচ হচ্ছে। ১০ টাকা কেজি দামে পাতা বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে মজুরি সাড়ে ২৭ টাকা বাড়িয়ে ১২২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। তারও চাপও সামলাতে হচ্ছে।

চা চাষিদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার চা চাষি রয়েছেন। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলায় ৫ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ১৫ হাজার ক্ষুদ্র চা বাগানের সঙ্গে জড়িত। পাতার দাম কমে যাওয়ায় তাঁরা ভাবতে পারছেন না, কেমন করে পরিস্থিতি সামলে উঠবেন। রাজগঞ্জের চা চাষি মনোজ রায় বলেন, “একদিকে পাতার দাম কমছে অন্যদিকে ওষুধ, রাসায়নিক সারের দাম, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে। ওই পরিস্থিতিতে বাগান চালু রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন