শিলিগুড়ি পুরভোটের পর এ বার বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের সমর্থিত প্রার্থীরা হারলেন। রবিবার শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের নিবার্চনের গণনার ফল প্রকাশ হতেই দেখা যায় তৃণমূল প্রভাবিত দার্জিলিং জেলা তৃণমূল লিগ্যাল সেলের সমর্থিত ওই প্রার্থীরা হেরে গিয়েছেন। শনিবার শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন হয়। গত বছর শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের নিবার্চনে সহসভাপতি, সহকারি সম্পাদক এবং কার্যনির্বাহী কমিটির ৫টি সদস্য পদে তৃণমূলের আইনজীবী সংগঠনের সদস্যরা জিতেছিলেন। এ বার কার্যনির্বাহী কমিটির ২ টি পদ ছাড়া আর কোনও আসনেই তারা জিততে পারেননি। তাতে কার্যত শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে ভরাডুবি হল তাদের।
বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন নিবার্চনে কংগ্রেস প্রভাবিত সংগঠনের সমর্থিত যে প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি পদে সুরেশ মিত্রুকা। সহসভাপতি উদয় শঙ্কর মালাকার। সম্পাদক পদে জয়ী চন্দন দে। গ্রন্থাগারিক পদে সৌভিক সেনগুপ্ত, সহকারি সম্পাদক পদে বিদিশা দে এবং সন্তোষ সাহা জয়ী হয়েছেন। এগজিকিউটিভ কমিটির ৯টি পদের মধ্যে জয়ী ৬ জন সদস্যই কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের সদস্য। বাকি তিনটির মধ্যে ২টি পদে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের সদস্য আব্দুল মান্নান এবং রিমা সরকার। অপরটি বাম নিয়ন্ত্রিত সংগঠন ডিএলএ’র সমর্থিত প্রার্থী বহ্নি চক্রবর্তী। বার অ্যাসোসিয়েশনের নিবার্চন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আহ্বায়ক প্রফুল্ল বিশ্বাস জানান, প্রার্থীরা কোনও দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন জমা দেন না। ডিএলএ এই নির্বাচনে কেবল তিনটি পদের জন্য প্রার্থী দিয়েছিল। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, শিলিগুড়ি পুরভোটের ব্যস্ততার জন্য বাকি পদগুলিতে প্রার্থী দেওয়া যায়নি।
বার অ্যাসোসিয়েশনে হার নিয়ে বিব্রত তৃণমূল শিবির। দার্জিলিং জেলা তৃণমূল লিগ্যাল সেলের সভাপতি পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে কোনও রাজনীতির রং আমরা দেখি না। তৃণমূলের আইনজীবী সংগঠনের যে সদস্যরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আমরা তাদের সব রকমের সহায়তা এবং সমর্থন দিয়েছি এই মাত্র। তবে পুর নির্বাচন থাকায় এ দিকে ঠিক মতো নজর দেওয়া যায়নি।’’ তৃণমূল বিরোধী কংগ্রেস, বাম শিবির অবশ্য তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের ওই যুক্তি মানতে নারাজ। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস আইনজীবী সেলের অন্যতম তথা নিবার্চন কমিটির আহ্বায়ক নিলয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা আমাদের প্যানেল তৈরি করে প্রার্থী দিয়েছিলাম। তৃণমূলের আইনজীবী সেলের তরফেও প্যানেল তৈরি করে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। বার অ্যাসোসিয়েশনের সমস্ত পদেই আমরা জিতেছি। তৃণমূল এ বার দাঁত ফোটাতে পারেনি।’’ এই জয়ের জন্য কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত আইনজীবী সেলের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলা নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক কুন্তল গোস্বামী। বাম প্রভাবিত ডেমোক্রেটিক লইয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুভাশিষ সাহাও দাবি করে, দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন জমা না পড়লেও তৃণমূল আইনজীবী সেলের তরফে রীতি মতো প্যানেল করেই প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। এখন ভোটে হেরে দায় এড়াতে চাইছে তাদের নেতারা। পদাধিকারিকদের মধ্যে ওদের একজন প্রার্থীও জিততে পারেননি।
বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরেশবাবু ৪১০ ভোট পেয়ে সভাপতি পদে জিতেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের সমর্থিত প্রাথী চিন্ময় তক্রবর্তী পেয়েছেন ৩৪২ ভোট। সহসভাপতি পদে উদয়বাবু ৮৭ ভোটে হারিয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী গুরিন্দ্র সিংহ ভোগেলকে। সম্পাদক পদে চন্দন দে ৩০৭ রেকর্ড ভোটে হারিয়েছেন তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের সমর্থনে থাকা সন্দীপ মণ্ডলকে।