নিজেদের বৃত্তির টাকায় বন্ধুকে জাতীয় প্রতিযোগিতায় পাঠাল দুই ছাত্রী

ছোট থেকে হোমেই মানুষ। বাড়ির ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম কিছুই মনে নেই। বছর তিনেক আগে হোমেরই তত্ত্বাবধানে তাইকন্ডো প্রশিক্ষণ ক্লাসে মিনু-রাখীর আলাপ পূর্ণিমার। স্থানীয়-আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে তারা দু’জন জাতীয় পর্যায়ে জয়পুরে খেলতে যাচ্ছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ১২:১০
Share:

জুটি: মিনু আর রাখী। নিজস্ব চিত্র

ছোট থেকে হোমেই মানুষ। বাড়ির ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম কিছুই মনে নেই। বছর তিনেক আগে হোমেরই তত্ত্বাবধানে তাইকন্ডো প্রশিক্ষণ ক্লাসে মিনু-রাখীর সঙ্গে আলাপ পূর্ণিমার। স্থানীয়-আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে তারা দু’জন জাতীয় পর্যায়ে জয়পুরে খেলতে যাচ্ছে। অথচ আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল পূর্ণিমার। সুযোগ পেয়েও বন্ধু যাতে পিছিয়ে না পড়ে, তার জন্য নিজেদের বৃত্তির পুরো টাকাটা পূর্ণিমার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিয়ে নজির গড়ল মিনু আর রাখী।

Advertisement

ওই প্রতিযোগিতায় যাতায়াত এবং আনুষঙ্গিক খরচ প্রতিযোগীকে বহন করতে হয়। খরচ প্রায় ৭ হাজার টাকা। জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি পাড়ার বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা জাতীয় পর্যায়ে বাছাই হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন টোটো চালক বাবা সাগর রায় এবং মা কাঞ্চনাদেবী। সংসার খরচ, দুই মেয়ের পড়াশোনা-বিয়ের জন্য সঞ্চয় করে খেলার খরচ জোগানোর সামর্থ্য হয়নি ওই পরিবারের। এক দিন বিকেলে রায়কতপাড়ার মাঠে অনুশীলনের সময় পূর্ণিমার মুখে সে কথা জানতে পারে মিনু এবং রাখী। হোমে ফিরে কর্তৃপক্ষকে দু’জনেই জানায় বৃত্তির ৩ হাজার টাকার পুরোটাই তারা পূর্ণিমাকে তুলে দিতে চায়। দু’জনের বৃত্তি মিলিয়ে ৬ হাজার টাকা তুলে দেয় বান্ধবীর পরিবারকে। ফলে আগামী ২২ মে মিনু, রাখীর সঙ্গে পূর্ণিমাও যাচ্ছে জয়পুরে খেলতে।

জলপাইগুড়ির অনুভব হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায় বলেন, ‘‘হোমের মেয়েদের তো সমাজের অনেকে অন্য চোখে দেখে। কিন্তু মিনু এবং রাখী বান্ধবীদের জন্য যা করল তা বর্তমান সমাজের শেখা উচিত।’’

Advertisement

মিনু এবং রাখী স্কুলস্তরে তাইকন্ডো খেলার পরিচিত নাম। নানা শিরোপা পাওয়ার পরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলে তাদের প্রশিক্ষণের জন্যও নিয়ে যাওয়া হয়। সে সুবাদেই গত মাসে প্রথম ৩ হাজার টাকা করে বৃত্তি পেয়েছিল দু’জনেই।

হোমের দীপশ্রী দেবী জানালেন, মিনুকে পাওয়া গিয়েছিল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। রাখীকে নিয়ে আসা হয়েছিল ভক্তিনগর থেকে। দু’জনেই কোনও ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। তখন ওদের বয়স চার-পাঁচ। এখন মিনু নবম শ্রেণি এবং রাখী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। দীপশ্রী দেবী বললেন, ‘‘আর পাঁচটা মেয়ের মতো ভবিষ্যতে ওদের দেখভাল করার মতো পরিবার নেই। তবু জমানো টাকার সবটা তুলে দিল বান্ধবীকে।’’

পূর্ণিমার মা কাঞ্চনাদেবী বললেন, ‘‘এমন ঘটনা এত দিন শুধু গল্পেই শুনেছি। বাস্তবে প্রথম দেখলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন