বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী! এটাই যেন ঘোষণা পুজো উদ্যোক্তাদের। সারা শহরেই সেই যুদ্ধের আবহ। পুজোর প্রচারের এই যুদ্ধে যুযুধান কোচবিহারের পুজো উদ্যোক্তারা।
দিন যত এগোচ্ছে ততই প্রচার নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ বাড়ছে উদ্যোক্তাদের। নিজের শহর তো বটেই, বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকে লাগোয়া শহরের দর্শক টানার চেষ্টাতেও এবার কোমর বেঁধে নেমেছেন। সব মিলিয়ে কোচবিহার এখন রকমারি ব্যানার, হোর্ডিং, ফ্লেক্সে ছয়লাপ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচারের খামতি নেই। ফেসবুকের ‘দেওয়াল’ থেকে ‘হোয়্যাটসঅ্যাপ’ গ্রুপ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে প্রতি মুহূর্তের আপডেট। মণ্ডপে দর্শনার্থী টানার লড়াইয়ে অন্যকে টেক্কা দিতে হবে যে!
উদ্যোক্তাদের একাংশের বক্তব্য, একটা সময় ছিল যখন কোচবিহার জেলা জুড়েই বিগ বাজেটের পুজোর সংখ্যা ছিল কম। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। বিগ বাজেটের পুজোর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনই মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা থেকে আলোকসজ্জা— সবেতেই বড় শহরের মত আধুনিকতার ছাপ লেগেছে। তাই পুজোর সময় দর্শনার্থীদের একাংশ প্রথম থেকেই বাছাই করা মণ্ডপ দেখার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন। সময়ে কুলোলে পরে নিজের তৈরি তালিকার বাইরে প্রতিমা দর্শন! ফলে বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। দর্শনার্থীরা যদি আগে ভাগে ‘থিম’ জানতে পারেন তাহলে তাদের ওই মণ্ডপে আসবার আগ্রহ বাড়বে। তাই ব্যানার, হোর্ডিং, ফ্লেক্সের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও জমেছে জোর লড়াই।
কোচবিহার শহরের অন্যতম ব্যস্তস্তম এলাকা হিসাবে পরিচিত স্টেশন মোড়ের ছবিটাই ধরা যাক। কোচবিহার শহরের বেশ কয়েকটি পুজো কমিটির সঙ্গে ঝুলছে দিনহাটা স্টেশন রোড সর্বজনীনের (মুক্তধারা) বিশাল হোর্ডিং। সুর্বণ জয়ন্তী বর্ষের নজরকাড়া আয়োজনের বার্তা দিতে দেওয়া ওই হোর্ডিং দেখে কোচবিহার জেলা শহরই শুধু নয় বাইরের বহু বাসিন্দার নজর কাড়ছে। ওই পুজো কমিটির আহ্বায়ক অসীম নন্দী বলেন, “জেলার অন্যতম বিগ বাজেটের পুজো করছি আমরা। জেলার সমস্ত এলাকার দর্শনার্থীরা আসুন, সেটা চাইছি। কোচবিহার জেলা শহরে প্রচার না হলে তা হবে কী করে! ”
কোচবিহারের উদ্যোক্তাদের মধ্যে বটতলা স্পোর্টিং ক্লাবের ‘ খুল যা সিমসিম- আলিবাবা ৪০ চোর’, লীলাস্মৃতি ভবানী মন্দিরের ‘ সপ্তম আশ্চর্য’ , রবীন্দ্রনগর সেবা সঙ্ঘের আকর্ষণ ২৫ ফুটের দুর্গা, বেলতলা ইউনিটের গোপাল ভাঁড়ের ভূতদর্শন, ভারতী সঙ্ঘের যামিনী রায়ের চিত্র অনুকরণ, চালতাতলা যুব সঙ্ঘের মা আসছেন বিশেষ রূপে— এ সবেরই প্রচার হচ্ছে।
খাগড়াবাড়ি সর্বজনীনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও জমে উঠেছে। সদস্যরা অনেকে পুজো প্রস্তুতি ফেসবুকেও ছবি পোস্ট করছেন। শহরে উদ্যোক্তাদের ব্যানারেও উঠে এসেছে, কোচবিহারে পুজোর মুখ ...কে বা কারা ? ভাবতে থাকুন। আমরা আসছি। যুব সঙ্ঘের কর্তা সন্দীপ মিত্র বলেন, “বিপণন যুদ্ধ এখন দর্শক টানার লড়াইয়ের মতোই কঠিন। প্রচার চাই-ই।”