চা বাগানে মেলে না পরিষেবা

অচলাবস্থায় থাকা ডুর্য়াসের চা বাগানগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থা যথাযথ তো নয়ই, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসার ন্যুনতম পরিষেবাটুকু মিলছে না বাগানের হাসপাতালগুলিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৫৪
Share:

অচলাবস্থায় থাকা ডুর্য়াসের চা বাগানগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থা যথাযথ তো নয়ই, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসার ন্যুনতম পরিষেবাটুকু মিলছে না বাগানের হাসপাতালগুলিতে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক দল চিকিৎসকের এটাই পর্যবেক্ষণ। অপুষ্টি আর বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য বাগানগুলিতে মৃত্যুর হার বেশি বলে তাঁরা মনে করেন। ওই সমস্ত বাগানের দুঃস্থ শ্রমিক পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে তারা ইতিমধ্যেই ছুটির দিনে দল বেঁধে সেখানে গিয়ে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হন। রবিবার তারা ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ারে রহিমাবাদ চা বাগানে স্বাস্থ্য শিবির করেন।

Advertisement

আগের দিন তারা শিবির করেন হান্টাপাড়া চা বাগানে। অন্যান্য চা বাগানগুলিতেও তাঁরা চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে শিবির করতে চান বলে জানিয়েছেন। এ দিন ৮ জন চিকিৎসকের দলটি সকাল থেকেই চা বাগানে স্বাস্ত্য শিবির করেন। বাগানের দুঃস্থ শ্রমিক পরিবারের শতাধিক বাসিন্দা সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

এ দিন চিকিৎসক দলটির নেতৃত্বে থাকা অর্চক রায় বলেন, ‘‘বাগানের হাসপাতালগুলি কাজ করছে না। শ্রমিক বা তাঁদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে বাগানের হাসপাতালে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। স্থানীয় হাসপাতালগুলি বাগান থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় সেখানে রোগী নিয়ে যেতে যাতাযাতের খরচ জোগাতে পারছেন বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে বাগানগুলিতে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে আমাদের চিকিৎসকদের একটি দল উদ্যোগী।’’ আগামীতে অন্য বাগানেও পরিষেবা পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হবেন বলে জানান।

Advertisement

দলের চিকিৎসকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ বাগানের বাসিন্দাদের পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিন চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে পাহাড়ি ঝোরা থেকে তারা জল সংগ্রহ করে আনেন। সেই জলও পানের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। তাতে জল বাহিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে শ্রমিক পরিবারগুলির মধ্যে। একেই অর্ধাহার, অপুষ্টি রয়েছে। তার উপর পানীয় জলের মাধ্যমে রোগ সংক্রণ ছড়ানোয় শ্রমিক পরিবারগুলি দিশেহারা হয়ে পড়ছে।

আইনএনটিটিইউসি’র নেতা অলক চক্রবর্তীর দাবি, দীর্ঘ দিনের অব্যবস্থার জন্যই এই পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার বাগানের সমস্যা মেটাতে চেষ্টা করছে। যেখানই খবর পাওয়া যাচ্ছে কোনও বাগানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠিক নেই, পানীয় জল মিলছে না সেখানে চিকিৎসক দল পাঠানো হচ্ছে। পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক, মহকুমা শাসক, বিডিওদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন এ সব ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে। না হলে কিছু ঘটলে তাদের কৈফিয়ৎ দিতে হবে। তবে বাগানে কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে স্থানীয় শ্রমিক নেতা, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের তরফে বিষয়টি প্রশাসনের এই কর্তাদের জানানো উচিত। তাদেরকে দায়িত্বটুকু নিতে হবে।’’ বাম শ্রমিক নেতা তথা চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম মনে করেন, চিকিৎসকরা যথার্থই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাগান লাগায়ো যে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি রয়েছে সেখান থেকে চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা যাতে কেউ না কেউ গিয়ে বাগানে নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা দেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’’ পানীয় জলের ব্যবস্থাও যথাযথ করার দাবি তুলেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন