জলে বিষ ছড়িয়ে মাছ শিকার, বোরোলি কমছে কোচবিহারে

লুকিয়ে-চুরিয়ে নদীতে কীটনাশক ঢেলে বোরোলি মাছ ধরার প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে কোচবিহারে। ফলে, তোর্সায় ক্রমশ কমছে বোরোলি। মৎস্যজীবীরা প্রায় সকলেই সে কথা স্বীকার করছেন। সরকারি স্তরে জলে বিষ ছড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করতে অভিযান না হলে আগামী দিনে তোর্সায় বোরোলি মেলাই ভার হবে বলে জেলেদের অনেকেই মানছেন। রামপ্রকাশ দাস, বিকাশ দাসের মতো মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, প্রশাসনিক স্তরে নদীতে কীটনাশক ছড়িয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে সে ভাবে কেউ উদ্যোগী না হওয়ায় সমস্যা জটিল হচ্ছে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

——নিজস্ব চিত্র।

লুকিয়ে-চুরিয়ে নদীতে কীটনাশক ঢেলে বোরোলি মাছ ধরার প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে কোচবিহারে। ফলে, তোর্সায় ক্রমশ কমছে বোরোলি। মৎস্যজীবীরা প্রায় সকলেই সে কথা স্বীকার করছেন। সরকারি স্তরে জলে বিষ ছড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করতে অভিযান না হলে আগামী দিনে তোর্সায় বোরোলি মেলাই ভার হবে বলে জেলেদের অনেকেই মানছেন। রামপ্রকাশ দাস, বিকাশ দাসের মতো মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, প্রশাসনিক স্তরে নদীতে কীটনাশক ছড়িয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে সে ভাবে কেউ উদ্যোগী না হওয়ায় সমস্যা জটিল হচ্ছে।

Advertisement

তবে কোচবিহারের জেলা মৎস্য দফতর দাবি করেছে, নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরা রুখতে প্রচার-অভিযান শুরু হয়েছে। জেলা মৎস্য আধিকারিক অলোক প্রহরাজ বলেন, “মৎস্যমন্ত্রীকে সবই জানানো হয়েছে। তাঁর সবুজ সঙ্কেত পেয়ে আমরা সব রকম পদক্ষেপ করছি। বোরোলি বাঁচাতে একটি পাইলট প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তা হচ্ছে। বোরোলির মতো সুস্বাদু মাছ হারিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। প্রচার-সচেতনতাও চলছে।” বিষয়টি নিয়ে জেলা মৎস্য দফতর মৎস্য মন্ত্রীকে সবিস্তারে রিপোর্টও পাঠিয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোট পর্ব মিটলে মৎস্যমন্ত্রী নিজেও বোরোলি সংরক্ষণের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে কোচবিহারে যাবেন।

বস্তুত, কোচবিহারের তোর্সার বোরোলির চাহিদা রয়েছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেই চাহিদা মেটাতে ইদানীং নদীতে কীটনাশক ঢেলে দিয়ে রাতারাতি বেশি মাছ ধরার চেষ্টা করেন অনেকে। কীটনাশক ঢাললে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। তখন বোরোলির মতো অনেক মাছই ভেসে ওঠে। ওই ভাবে দিনের পর দিন মাছ ধরার ফলে বোরোলির পরিমাণ যে কমছে তা সরকারি সমীক্ষাতেও ধরা পড়েছে। যেমন মৎস্য দফতরের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৫ বছর আগেও যেখানে মাসে ১২৬ কেজির বেশি বোরোলি মিলত, সেখানে এখন মাসে ৬২ কেজি মেলে। তাই দামও আকাশছোঁয়া।

Advertisement

কোচবিহার জেলায় প্রায় লাখ দু’য়েক মানুষ মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে তোর্সার ধারের বাসিন্দা যাঁরা, তাঁদের অনেকেই নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। কালিঘাট এলাকায় এখনও প্রায় শতাধিক বাসিন্দা মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের অনেকেই সকাল, সন্ধ্যায় নদীতে নেমে জাল দিয়ে মাছ ধরেন। তাঁদের মধ্যে রামপ্রসাদ দাস, বিকাশ দাসেরা জানান, এখন সারাদিন খাটুনির পর সন্ধ্যার সময় কিছু বোরোলি মাছ জালে ধরা পড়ে। তাঁরা বলেন, “এখন তোর্সায় মাছ মেরে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এক সময় অনেক মাছ ধরা যেত। এখন সামান্য মাছ ধরা পড়ে। মৎস্য দফতর উদ্যোগী হলে ভাল হয়।”

তবে মৎস্য দফতর মনে করে, শুধু কীটনাশক নয়, নানা ভাবে জল দূষণ হওয়াও বোরোলির সংখ্যা কমে যাওয়ার একটি কারণ। উপরন্তু, অনেকে মাছেদের প্রজননের সময়েও মাছ ধরেন বলে সমস্যা বাড়ছে বলে অনুমান মৎস্য দফতরের। মৎস্য আধিকারিক বলেন, “প্রজননের সময়ে যাতে কেউ মাছ না ধরেন সে ব্যাপারে মৎস্যজীবীদের সচেতন করতে হবে। ওই সময়ে মাছের পেটে ডিম থাকে। তাতে মাছের সংখ্যা যেমন বাড়বে। মাছের সংখ্যা বাড়লে আখেরে সকলেরই লাভ, এটা মৎস্যজীবীদের বোঝানো হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন