এই দৃশ্য এখন চেনা নিকাশি নালায়। জলপাইগুড়ি শহরে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
কোথাও ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে খলসে, পুঁটি, কোথাও দৌরাত্ম্য ট্যাংরা-মৌরলার।
পরিচিত নদীর চেনা স্রোতে নয়, বাঙালির অতি প্রিয় এইসব মাছ দেখা যাচ্ছে জলপাইগুড়ি শহরের একাধিক নিকাশি নালায়। আর হাতের নাগালে পেয়ে যাওয়া এইসব মাছ ধরতে তাই সকাল থেকেই জেলেপাড়ার ব্যস্ততা জলপাইগুড়ি শহরের পাড়ায় পাড়ায়। রসনা তৃপ্তির আশায় কেউ জুটিয়ে ফেলেছেন বঁড়শি। কেউ বা আবার তা-ও না পেয়ে মশারি জুটিয়ে নেমে পড়েছেন মৎস্য শিকারে। ছেলে হোক বা বুড়ো, বয়স বাধা হয়নি কোনও। সপ্তাহের শুরুতে অতিবর্ষণে নিকাশি নালাগুলিতে মাছ দেখতে পেয়ে খুশি শহরবাসী।
বর্ষার সময়ে নিকাশি নালাগুলিতে মাছের হুটোপুটি অবশ্য এই প্রথম নয়। তবে এবার শহরে অনেক বেশি মাছের দেখা মিলছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। অনেকেই জানাচ্ছেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পরে এ ভাবে কই, খলসে, পুঁটি, ট্যাংরা, মৌরলা মাছের ঝাঁক খেলে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। মাছ দেখার জন্য ভিড় জমছে। শহরের নিউটাউন পাড়া, নতুনপাড়া, পাণ্ডাপাড়ায় সকাল থেকেই মাছ ধরার জন্য ব্যস্ততা। নিউটাউন পাড়ার দুই যুবক বিমল সরকার, দেবদুলাল দাস জানান, প্রতি বছর বর্ষায় কিছু না কিছু মাছ নালাগুলিতে দেখা যায়। কিন্তু এবারের মতো ঝাঁক বেধে মাছ ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়নি আগে। ছেঁড়া মশারির টুকরো দিয়ে খুব কম সময়েই অন্তত তিনশো গ্রাম মাছ ধরেছেন তাঁরা। দেবদুলাল বললেন, “বাজারে এইসব মাছের দেখাই মেলে না বিশেষ। কোনও দিন যদি আসে, দামের জন্য ছোঁয়া যায় না।”
কেন এ বারের বৃষ্টিতে এত মাছ উঠে এল নিকাশি নালায়?
জলপাইগুড়ির জেলা মৎস্য আধিকারিক পার্থসারথি দাস জানান, গত সোমবার থেকে অতিবৃষ্টির কারণে শহর সংলগ্ন বিভিন্ন পুকুর, খাল, বিল উথলে উঠেছিল। সেখানকার মাছ শহরের নিকাশি নালাগুলিতে ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, “আচমকা বন্যা পরিস্থিতির কারণে যারা পুকুরে মাছ চাষ করেন, তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে। রোদ উঠতে তাঁরা টের পাচ্ছেন, সেখানে মাছ নেই। সবই পালিয়েছে।” মাছচাষিদের মাথায় হাত পড়লেও ভুলতে বসা দেশি মাছের স্বাদ পেয়ে খুশি শহরের মানুষ। নালার জল ছেঁকে ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় অনেকেরই জালে উঠে আসছে বাজারের মহার্ঘ্য কই, ট্যাংরা।
কেউ বিক্রির কথা ভাবছেন না। বরং কালো জিরে না শর্ষের ঝোল, কী দিয়ে রান্না হবে, এই আলোচনাতেই জমজমাট শহরের অলিগলি।