সোমবার লেবং-এ রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
দার্জিলিং লাগোয়া লেবং এলাকার ৬৪টি পরিবার তৃণমূল ছেড়ে তাঁদের দলে যোগ দিলেন বলে গোর্খা জনমুক্তির তরফে দাবি করা হয়েছে। সোমবার দার্জিলিঙের পাতলেবাসে মোর্চার সদর দফতরে দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের উপস্থিতিতে ওই দলবদল হয়। মোর্চার তরফে জানানো হয়েছে, তৃণমূল ওই পরিবারগুলির লোকজনকে কাজ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। তাই তাঁরা সকলে মোর্চার যোগদান করেছেন। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পাহাড় কমিটির সহকারি সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম ঠাকুরির নেতৃত্বে লেবং-এর ফুপশিরিং এলাকার ৪২টি এবং মঙ্গলপুরী এলাকার ২২টি পরিবার তৃণমূল ছেড়েছে।
মোর্চা সভাপি বিমল গুরুঙ্গ বলেন, “পাহাড়ে তৃণমূলের প্রায় অস্তিত্ব শেষ হয়ে এসেছে। পাহাড়ের বাসিন্দারা তৃণমূলের কথায় আর ভুলছেন না। এদিন লেবং এলাকার বাসিন্দারা দলে এলেন। আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আগামী দিনেও তাঁরাও মোর্চায় আসছেন।”
দল বদলের কারণ হিসাবে সংগ্রাম ঠাকুরি জানান, লেবং এলাকার চা বাগান রয়েছে। বহু পরিবারের বেকার ছেলেমেয়েরা আছেন। তৃণমূল আমাদের বলেছিল, পুলিশের হোমগার্ডে চাকরি হবে। দুঃস্থদের খাবার-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দেওয়া হবে। চা বাগানের শ্রমিকেরা মজুরি বাড়ানো হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, এরগুলির কোনটারই কিছু হয়নি। তাই সবাই বৈঠকের পর দল ছেড়েছি। পাহাড়ে জিটিএ রয়েছে। আমাদের নিশ্চয়ই ব্যবস্থা হবে। সংগ্রামের দাবি, “এ ছাড়াও পাহাড়ে তৃণমূলের নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। কোথাও কোনও কর্মসূচি ঠিকঠাক নেই। এই অবস্থায় ওই দলে থাকার কোনও মানেই হয় না।” এদিন দলত্যাগীরা জানান, বাদামতাম, বিজনবাড়ি, কালিম্পং, পোখরিবং, কাইজালে, নাগরি, ধাজে এবং গরুবাথান এলাকার বহু তৃণমূল সমর্থক সদস্য কয়েকদিনের মধ্যে মোর্চার যোগ দেবেন।
মোর্চার সভাপতির অভিযোগ, তৃণমূল পাহাড়ের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদের রাজনীতি করেছে। আমাদের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করেছে। যাঁরা তৃণমূল ছাড়লেন তাঁরা বুঝেছেন, পাহাড়ে কোনও কাজ করতে হলে তা জিটিএ-র মাধ্যমেই করতে হবে। তৃণমূল নেতা এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী যতই বলুন না কেন, জিটিএকে বাদ দিয়ে পাহাড়ে কোনও কাজ বা পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। যেমন ভাবে সমতল এলাকায় আমরা কিছু করতে পারব না। আমি ওই বাসিন্দাদের বিষয়টি বুঝিয়েছি। একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থেকে পাহাড়ের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান-সহ সব কাজ করতে হবে। আলাদা আলাদা দলে থেকে তা সম্ভব হবে না।
গুরুঙ্গের কথায়, “এই বাসিন্দারাগুলি এমন একটা দলে গিয়েছিলেন, যে দলটি আলাদা রাজ্য চায় না। এটা খুব দুঃখের। তবে ওঁরা ভুল বুঝতে পেরেছেন। লোকসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই তৃণমূল নেতৃত্ব আমাদের উপর নানা ভাবে চাপ দিয়েছিলেন। তাও আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে সরে আসেনি। আমি ভোটেও জিতেছি। আলাদা রাজ্যের দাবি আমরা কোনও সময়ই ছাড়ছি না।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের পাহাড় কমিটির অন্যতম নেতা এনবি খাওয়াস বলেন, “যাঁদের রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি ও ধৈর্য্য নেই, তাঁরাই একদল থেকে আরেকদলে ঘুরে বেড়ান। কোনও কাজের জন্য তো কিছুদিন সময় লাগবে। সেটা বুঝতে হবে। আর আমরা কাউকে চাকরি বা খাবার দেব তা বলিনি। আমরা সবার উন্নয়নে কাজ করব বলেছিলাম।” তিনি জানান, যাঁরা বলছেন পাহাড়ে তৃণমূল শেষ হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের এতটুকুই বলব, সময়মত তা বোঝা যাবে।