ন’বছর ধরে আরপিএফের এক জওয়ানের খোঁজ নেই। হেমন্ত মণ্ডল নামে ওই নিখোঁজ জওয়ানের ছেলে অসীম মণ্ডলকে দু’সপ্তাহের মধ্যে চাকরি দেওয়ার জন্য বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। সেই সঙ্গে ওই জওয়ানের অবসরকালীন প্রাপ্য তাঁর স্ত্রীকে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
মালদহের ইংরেজবাজার থানা এলাকার নিয়ামতপুরের বাসিন্দা হেমন্তবাবু ১৯৮৫ সালে আরপিএফে চাকরি পান। লিলুয়ায় এসে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। সেখানেই কাজ করছিলেন তিনি। ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে ওই জওয়ান স্ত্রীকে টেলিফোনে জানান, তাঁর ঘুম হচ্ছে না। সেই জন্য পরের দিন তিনি চিকিৎসকের কাছে যাবেন। স্বামীর সমস্যার কথা শুনে ওই জওয়ানের স্ত্রী নন্দিতা মণ্ডল মালদহ থেকে লিলুয়ায় চলে আসেন। এসে দেখেন, হেমন্তবাবুর ঘরে তালা ঝুলছে। আশেপাশে খোঁজখবর করেও তিনি স্বামীর কোনও খবর পাননি। সন্ধান পাওয়া যায়নি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাড়িতেও। লিলুয়া থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করেন নন্দিতাদেবী। সেই সঙ্গে তিনি হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার ও রাজ্যের গোয়েন্দা দফতরকে বিষয়টি জানান। রেলের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিখোঁজ হেমন্তবাবুকে অবিলম্বে কাজ যোগ দিতে বলা হয়। তাতেও কোনও সাড়া মেলেনি। বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে আরপিএফ। আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়ার শেষে নিখোঁজ হেমন্তবাবুকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে রেল।
তার পরে ন’বছর কেটে গিয়েছে। হেমন্ত অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা হয়নি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেল হেমন্তবাবুর স্ত্রীকে চাকরির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু যে-হেতু তাঁরও বয়স হয়েছে, তাই নিজের ছেলে অসীমকে ওই চাকরি দেওয়ার আর্জি জানান নন্দিতাদেবী। কিন্তু রেল-কর্তৃপক্ষ অসীমকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও রকম আগ্রহ দেখাননি। আবেদন-নিবেদনে কাজ না-হওয়ায় নন্দিতাদেবী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। রেলের আইনজীবী অবশ্য নিখোঁজের ছেলেকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে রেলের আপত্তির কথা আদালতে বলেননি। বিচারপতিকে তিনি বলেন, রেলের নিয়ম অনুযায়ী নিখোঁজ কর্মীর প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে থাকলে এবং কর্মীর স্ত্রী আপত্তি না-করলে তাঁকে চাকরি দেওয়া যায়। বিচারপতি দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বলেন, এক জন উপার্জনকারী নিখোঁজ হয়ে গেলে সেই পরিবারের অবস্থাটা কী দাঁড়ায়, সেটাই বিবেচনা করা উচিত। নন্দিতাদেবী এজলাসের বাইরে বলেন, ন’বছর ধরে হাজারো খোঁজখবর চালিয়েও তাঁর স্বামীর সন্ধান মেলেনি। তাঁর কী হল, সেটা রহস্যই থেকে গিয়েছে। এখন সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিচারপতি ছেলেকে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় আপাতত সেই সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে পারে।