নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক পুলিশ অফিসার। তাঁর পাশে দুজন কনস্টেবল। আর ওই পুলিশ অফিসারের নির্দেশে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে টিনের শেডের নিচের কার্নিশ থেকে বোমা নামালেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তারপর বালতির জলে চুবিয়ে নিষ্ক্রিয় করলেন বোমাটিকে। বুধবার দুপুরে মালদহের চাঁচলের ওই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশকর্মীরা থাকা সত্ত্বেও কেন এক জন প্রশিক্ষণহীন সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে ওই কাজ করানো হল। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশকর্মীদের কেউ বোমা নামাতে রাজি হননি। পুলিশের অফিসারের নির্দেশে বাধ্য হয়েই কাজে নামেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য অবশ্য বলেন, “আমার কাছে এখনও কোনও অভিযোগ কেউ করেনি। তা পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। আর হাটের মধ্যে বোমা কোথা থেকে এল তা দেখা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওটি একটি দেশি সূতলি বোমা ছিল।
প্রতি বুধবার চাঁচলে একটি সাপ্তাহিক হাট বসে। এ দিন হাটের একটি টিনের চালার কার্নিশে বোমাটি দেখতে পান কয়েকজন শ্রমিক। ওই শেডের নিচে সব্জি রাখেন হাটের বিক্রেতারা। খবর পেয়ে সেখানে যান চাঁচল থানার এসআই অমর সাহা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দু’জন কনস্টেবল ও চার জন সিভিক ভলান্টিয়ার। অমরবাবুই সিভিক ভলান্টিয়ার শিস মহম্মদকে বোমাটি নামানোর নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। শিস মাত্র পাঁচ মাস আগে কাজে যোগ দিয়েছেন। শিস মহম্মদ বলেন, “আমাদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই। মারাও যেতে পারতাম। কিন্তু অফিসারদের নির্দেশ মেনেই চলতে হয়।” অভিযুক্ত এসআই অমরবাবু অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, বড়মাপের ঘটনা ছাড়া সাধারণত এই ধরণের বোমা মিললে বম্ব স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয় না। মালদহে বম্ব স্কোয়াড নেই। শিলিগুড়ি থেকে ওই স্কোয়াড এসে পৌঁছনো সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে অফিসাররাই সাধারণত বোমা উদ্ধার করে জলে চুবিয়ে রাখেন। ধীরে ধীরে তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে পুলিশ মহলেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। জেলা পুলিশের কয়েকজন অফিসার জানান, যে কোনও ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে অফিসারদেরই সামনে থাকার কথা। পিছনে পুলিশের অন্য ফোর্সের সদস্যরা। এ দিন যা হয়েছে, তা একেবারেই বেআইনি এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে সিভিক পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় পোরিয়া বলেন, “এই ধরনেরর ঘটনা তো আকছার করে চলেছেন এক শ্রেণির পুলিশ অফিসার। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ঝুঁকির কাজ করানো হচ্ছে। আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।” তিনি জানান, দিনে ১৪১ টাকা দিয়ে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ-- সবকিছুই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে করানো হচ্ছে। চাঁচলের ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যথাস্থানে অভিযোগ জানানো হবে।