শীতের সব্জি বাজারে নতুন দুই অতিথি। জাপানি কুমড়ো ওরফে জুকিনি। সঙ্গী লাল বাঁধাকপি বা রেড ক্যাবেজ। এ বারের শীতে ‘এক্সোটিক ভেজিটেবল’ হিসাবে শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামীণ এলাকার কৃষি বলয়ে ক্যাপসিকাম, ব্রকোলির সঙ্গে নতুন সংযোজন এই দু’টি। বাজার তো বটেই নেপাল, ভুটান এবং সিকিমের বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখেই প্রথম বার কৃষি দফতরের উদ্যোগে দার্জিলিং জেলায় ওই দুই সব্জি চাষ শুরু হয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত অক্টোবর মাসের শেষ থেকে মহকুমার খড়িবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়া ব্লক মিলিয়ে ১২৫ বিঘা জমিতে ওই দুই সব্জি চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের শুরুতেই বাজারে পৌঁছে যাবে জুকিনি ও রেড ক্যাবেজ। এতদিন কলকাতা, দিল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ‘অন্য ধরনের’ সব্জি এই এলাকায় পৌঁছত। বর্ষার মরশুমের পরেই কৃষি দফতরের অফিসারেরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর করে দুই সব্জির চাহিদার কথা জানতে পারেন। চাষের ধরণ, পদ্ধতি, সার, কীটনাশক-সহ যাবতীয় খুঁটিনাটি নিয়ে চাষিদের নিয়ে কর্মশালাও হয়। ব্রকোলি কিংবা ক্যাপসিকাম চাষ করেন এমন বহু চাষি উৎসাহ প্রকাশ করায় শেষে পুণে থেকে কৃষি দফতরের উদ্যোগে বীজ এনে বিলি করা হয়। দুই ব্লকের ৩৫টি ফার্মাস ক্লাবের মাধ্যমে ওই চাষ শুরু হয়।
শিলিগুড়ির কৃষি দফতরের অন্যতম সহকারি অধিকর্তা মেহফুজ আহমেদ বলেন, “শিলিগুড়ি, নেপাল, ভুটান ও সিকিমে ওই সব্জির চাহিদা রয়েছে। স্যালাড ছাড়াও নানা ধরণের রান্নায় ওই সব্জি ব্যবহার হয়। ঠিকঠাক চাষ করলে যা খরচ তার থেকে দ্বিগুণ লাভও মেলে। সবই চাষিদের বোঝানোর পর তাঁরা ভীষণ উৎসাহী হয়ে নেমে পড়েছেন। আগামীবার জমির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।” সহকারি অধিকর্তা জানান, বছর তিনেক আগে এইভাবেই মহকুমায় ব্রকোলি চাষ শুরু হয়েছিল। মহকুমা জুড়ে এই ধরণের বিকল্প চাষে উৎসাহ বাড়াতে আমরা নতুন বছরের শুরুতে চাষিদের নিয়ে ‘এক্সোটিক ভেজিটেবল’ দিবস পালন করব বলে ঠিক করেছি। সেখানে চাষের তথ্য ছাড়াও সব্জিগুলির নানা ধরণের ব্যাঞ্জন তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন। দিনভর অনুষ্ঠান হবে।
কৃষি দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি শহরের অন্তত ৫টি বড় পাঁচতারা হোটেল এবং দুটি শপিং মলে প্রতিদিন বাইরে এই ধরনের সব্জি আনা হয়। এ ছাড়া ভুটান, নেপাল ও সিকিমের বাজারেও এই ধরনের সব্জি যায়। ফাঁসিদেওয়ার রাবভিটা এবং পানিট্যাঙ্কির এলাকায় কয়েকজন যুবক ওই সরবরাহের কাজ করে থাকেন। এবার শীতে স্থানীয়ভাবে তাঁরা এই ধরণের সব্জি পেলে তাঁদের পরিবহণ খরচও কম পড়ায় বাজারে কিছুটা দামও কম থাকবে। চাষিরাও উপকৃত হবেন। ডায়াটেরি ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন (এ, বি৬, সি, কে), পটাশিয়াম, ম্যাগনিশিয়াম-সহ একাধিক খাদ্যগুণে ভরপুর জুকিনি এবং রেড ক্যাবেজ খেতে চিকিৎসকেরাও সুপারিশ করে থাকেন।
মহকুমার খড়িবাড়ি ব্লকের দুলালজোত, গৌরসিংহজোত, প্রসাদুজোত, ভোগভিটা, দুধগেট এবং পানিট্যাঙ্কি এলাকায় মূলত জুকিনি চাষ হচ্ছে। অনেকটা লম্বা গাঢ় সবুজ রঙের শসা আকৃতির জুকিনির ভিতরটা হাল্কা হলদে রঙের হয়। স্যালাড, ভাজা, বেকড, সিদ্ধ ছাড়াও নানা সব্জির সঙ্গে রান্নায় জুকিনির ব্যবহার হয়। মূলত আমেরিকা এবং ইউরোপে এর প্রচলন খুবই বেশি। বীজ রোপণের পর ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে গাছে এই সব্জি আসা শুরু হয়ে যায়। প্রতি বিঘায় ৭ হাজার মত চাষে খরচ হলেও লাভ হয় বিঘা প্রতি প্রায় ১৫ হাজার টাকা। বাতাসি এলাকার চাষি তিমিলাল সিংহ বলেন, “অন্য ধরণের সব্জি বলতে এতদিন ব্রকোলি আর ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। এবার জাপানি কুমড়ো করছি। এখনই লোকজন এসে কেনার জন্য যোগাযোগ শুরু করছেন।”
এবারে মহকুমায় ব্রকোলি এবং ক্যাপসিকাম প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। ফাঁসিদেওয়া ব্লকের টামবাড়ি, গোয়াবাড়ি, নয়াহাট, জ্যোতিনগর, নিকরগছ, ফকিরগছ, গোয়ালগছের মত এলাকার রেড ক্যাবেজ বা লাল বাঁধাকপির চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন স্যালাডে খাওয়া হয় রেড ক্যাবেজ। তাছাড়া সিজলার্স এবং নানা ধরনের কন্টিনেন্টাল পদে ব্যবহার করা হয় রেড ক্যাবেজ। বিঘা প্রতি হাজার পাঁচেক টাকা খরচ করলে লাভ মেলে প্রায় ৮/১০ হাজার টাকা। জুকিনির মত ৬০ দিনেই এই সব্জিও বাজারে চলে আসে। টামবাড়ি এলাকার চাষি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, “অন্য সব্জির থেকে যত্ন বেশি করতে হচ্ছে। তবে লাভের আশা অন্য সব্জির থেকে বেশি রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষে ফসল হাতে পেয়ে যাব।”