ভগ্নপ্রায় ঐতিহ্যের ভবনগুলি

বহু ইতিহাস আর নানা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সাক্ষী কোচবিহার মহারাজাদের তৈরি ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির বেশির ভাগই আজ অবহেলায় তাদের জৌলুস হারিয়েছে। দ্রষ্টব্য হিসেবে ভবনগুলিকে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করা যেত। রাজ্যে পর্যটন মানচিত্রে প্রথম সারিতে রাখা যেত এই জেলাকে। তাই কোচবিহারের হেরিটেজ সোসাইটির প্রশ্ন রাজস্থান যদি জয়পুর ও উদয়পুরকে পুরনো চেহারায় ধরে রাখতে পারে তবে এ রাজ্যে কেন তা সম্ভব নয়?

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০১:৩২
Share:

সাবিত্রী লজ

বহু ইতিহাস আর নানা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সাক্ষী কোচবিহার মহারাজাদের তৈরি ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির বেশির ভাগই আজ অবহেলায় তাদের জৌলুস হারিয়েছে। দ্রষ্টব্য হিসেবে ভবনগুলিকে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করা যেত। রাজ্যে পর্যটন মানচিত্রে প্রথম সারিতে রাখা যেত এই জেলাকে। তাই কোচবিহারের হেরিটেজ সোসাইটির প্রশ্ন রাজস্থান যদি জয়পুর ও উদয়পুরকে পুরনো চেহারায় ধরে রাখতে পারে তবে এ রাজ্যে কেন তা সম্ভব নয়?

Advertisement

এখন যেটি জেলাশাসক বাংলো, সেটি একসময় ছিল সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ কোচবিহারের বাড়ি। সাগরদিঘির পাড়ের ‘মতিভবন’, কোচবিহার রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রীর বাড়িতে এখন তফসিলি জাতি-উপজাতি দফতর। আর ভিক্টর প্যালেসে হয়েছে রাজবংশী অ্যাকাডেমি। একসময় এখানে থাকতেন দেওয়ান কালিকাদাস দত্ত। ল্যান্সডাউন হল, খাসমহল, পুলিশ ক্লাব, নৃপেন্দ্র নারায়ণ ক্লাব, এসডিও অফিস, ট্রেজারি বিল্ডিং-সহ গোটা জেলায় ৪৫টি ঐতিহ্যবাহী ভবন রয়েছে। তবে যে ভবনগুলিতে সরকারি দফতর হয়েছে, সেগুলির তবুও দায়ে পড়ে কিছু সংস্কার হয়েছে। আর বাকীগুলির অবস্থা?

মহারাজার স্মৃতিজড়িত অধিকাংশ বাড়ির কাঠামোই ভগ্নপ্রায়। ঝোপঝাড়ে ঢেকেছে ইতিহাস। সংস্কারের অভাবে ঐতিহাসিক ভবনের ছাদ চুঁইয়ে এখন জল পড়ে। মাথায় টিনের ছাউনি দিয়ে অবস্থা সামলানোর চেষ্টা হয় কোথাও কোথাও। এ সব ভবন রক্ষায় ব্যক্তিগত ভাবে এগিয়ে আসেননি কেউ। প্রশাসন উদ্যোগী না হওয়ায় হেরিটেজ সোসাইটি তো বটেই, ক্ষুব্ধ বাসিন্দারাও।

Advertisement

অধুনা মহকুমাশাসকের দফতর।

উনবিংশ শতকের শেষে ঐতিহ্যের কোচবিহারকে আধুনিকতার মোড়কে সাজান মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ। তাই শহরে কাটা হয় ২৭টির বেশি পুকুর। পরিবেশ ভাবনা থেকে সাগরদিঘি ঘিরে বাড়ির পাশাপাশি তৈরি হয় অসংখ্য বাগান। আধুনিক রাস্তা, রাস্তা থেকে খানিকটা দূরে বাড়ি তৈরি ইত্যাদিতে পরিকল্পার ছাপ সর্বত্র। সব কিছুই পড়ে অবহেলায়।

কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির পক্ষে সম্পাদক অরূপ মজুমদার বলেন, “রাজস্থানের ঐতিহাসিক ভবন সংস্কার করে পুরনো আদলেই রেখে দেওয়ায় পর্যটকেরা ভিড় করেন প্রতিদিন। আর কোচবিহার ক্রমশ তার পুরনো জৌলুস হারাচ্ছে।” জেলার ঐতিহ্যবাহী ভবন সংস্কারের আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায় হেরিটেজ সোসাইটি।

জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে একসময় এই সমস্ত ভবন রক্ষায় সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছিল। সংগঠনের সম্পাদক অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ভবনগুলি রক্ষায় উদ্যোগী হয়ে আমরা পুরাতত্ত্ব বিভাগকে সহযোগিতার করতে চেয়েছিলাম। পরে আর আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগের চেষ্টা করেননি।” প্রশাসনের এক কর্তা জানান, বাড়িগুলি সংস্কারে টাকা বরাদ্দ করেনি সরকার। তাই জেলাশাসকের উন্নয়ন তহবিলের টাকায় বেশ কয়েকটি ভবনের সংস্কার করেন তারা। পাশাপাশি, আপাতত যে ভবন সংস্কারের কোনও পরিকল্পনা নেই, তাও স্পষ্ট করে দেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement