সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ এমই ছিল বালুরঘাট শহরের আকাশ। বৃহস্পতিবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
মৌসুমী বায়ু যে উত্তুরে হাওয়াকে ঠেকিয়ে রেখেছিল, সেই হাওয়াকে উত্তরবঙ্গে টেনে আনল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা।
তার প্রভাবেই বুধবার রাত থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র। রাত থেকেই কুয়াশা দেখা যায় শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার, বালুরঘাটেও। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কুয়াশা দেখা গিয়েছে সর্বত্র। উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায় দিনভরই কুয়াশা দেখা গিয়েছে। আকাশও ছিল মেঘে ঢাকা, দেখা মেলেনি রোদের।
সকাল থেকে সমতলের আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও, পাহাড় এ দিন ছিল ঝলমলে। দার্জিলিং শহর-সহ লাগোয়া এলাকাগুলিতে রোদের দেখা মিললেও, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম ছিল। সান্দাকফুর তাপমাত্রা এ দিন হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়। একই রকম আবহাওয়া ছিল সিকিমেও। যদিও, দার্জিলিঙের তুলনায় গ্যাংটকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ দিন কিছুটা বেশি ছিল। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, দার্জিলিঙের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ দিন ছিল ৫ ডিগ্রি, সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির কিছু বেশি ছিল।
আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণেই এ দিন বিভিন্ন এলাকায় আকাশ মেঘলা ছিল। রোদের তাপ না থাকায় দিনের তাপমাত্রাও ছিল অনেকটা কম। তাই ঘন কুয়াশাও দেখা গিয়েছে।”
শীত থেকে বাঁচতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
হুদহুদের কারণে চলতি বছরে উত্তরবঙ্গে শীত আসতে দেরি হবে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল। হুদহুদের জেরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের কারণে গত নভেম্বরের শেষেও উত্তরবঙ্গ এবং অসমে মৌসুমী বায়ু থেকে যাওয়ায়, উত্তুরে হাওয়া ঢুকতে পারেনি বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল। যার প্রভাবে ডিসেম্বরের শুরুতেও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। হঠাত্ই গত সোমবার থেকে উত্তরের শীত-চিত্র বদলাতে শুরু করে। কেন এই পরিবর্তন?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পশ্চিম হিমালয় এলাকা থেকে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের উপর দিয়ে অসমের দিকে এগোতে থাকে। ঝঞ্ঝাটির টানেই হিমালয় পাহাড় থেকে কনকনে উত্তুরে হাওয়া ঢুকে, ছড়িয়ে পড়েছে শিলিগুড়ি থেকে বালুরঘাটে। তাপমাত্রা কমার কারণে শুরু হয়েছে কুয়াশাও। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়িতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি। কোচবিহার এবং মালদহে ১২, বালুরঘাটের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি।
এ দিন দুপুরেও শিলিগুড়ির বেশ কিছু এলাকায় আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গিয়েছে। রাস্তার পাশে কাগজ বা কাঠ জোগাড় করে আগুন পোহাতেও জটলা দেখা গিয়েছে। কুয়াশার কারণে শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি যাওয়া ৩১ ডি জাতীয় সড়কে চলাচলকারী গাড়ির গতিও ছিল অত্যন্ত কম। সন্ধ্যের পর থেকেই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দুই শহরের ব্যস্ত রাস্তাতে যান চলাচলের সংখ্যা কমে যায়। বালুরঘাটেও ছিল একই চিত্র। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃষ্টির দানার মতো কুয়াশা দিনভর বাতাসে ভেসে বেরিয়েছে।
তবে এ দিন পর্যটকদের শীতের আমেজ উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে দার্জিলিঙে। এ দিন সন্ধ্যায় কুয়াশার মধ্যেই চৌরাস্তায় পর্যটকদের দেখা গিয়েছে। শৈলশহরের বিভিন্ন কফিশপেও পর্যটকদের আড্ডা দেখা গিয়েছে।