মালদহে সালিশি সভায় অপমানিত হয়ে ধর্ষিতা বধূর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় এখনও মূল অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি পুলিশ। শনিবার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার পৃথকভাবে মানিকচকের বসন্তটোলা গ্রামের ওই ঘটনার রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে পাঠিয়েছেন। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই ওই ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র। হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত করতে শুক্রবার দুপুরেই বসন্তটোলা গ্রামে যান মালদহের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বিভাস পট্টনায়ক। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার পৃথকভাবে মানিকচকের বসন্তটোলা গ্রামে সালিশি সভায় ধর্ষিতা গৃহবধূর আত্মঘাতীর রিপোর্ট কলকাতা হাইকোটে পাঠিয়েছেন। মালদহ জেলা পুলিশ ঘটনার তদন্তে কলকাতা থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে ডেকে পাঠিয়েছে।
জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “মানিকচকের বসন্তটোলার ঘটনার রিপোর্ট কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদবও একইভাবে বলেন, “হাইকোর্টে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। মূল অভিযুক্ত-সহ সালিশি সভায় গ্রামের যে সমস্ত ব্যক্তি ছিলেন, সবাই পলাতক। তল্লাশি চলছে এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প আছে।”
গত সোমবার রাতে মালিকচকের এক কিশোর প্রতিবেশী গৃহবধূর বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই বধূর চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা প্রতিবেশী নবীন মণ্ডল নামে এক কিশোরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ধর্ষিতা বধূ ও তাঁর স্বামী থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে গ্রামের ‘মাতব্বরেরা’ তাদের আটকায় বলেও অভিযোগ। গত মঙ্গলবার গ্রামে সালিশি সভা বসানো হয়। সভায় ধর্ষণকারীকে ২০ বার কান ধরে উঠবস করিয়ে ধর্ষিতার পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ধর্ষিতা বধূ ও তাঁর স্বামী সালিশি সভার বিচার মেনে নিতে পারেনি। তাঁরা পুলিশে অভিযোগ জানাবেন বলে অনড় থাকায় ওই মহিলাকে সালিশি সভাতেই ‘কুলটা’ বলে অপবাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
অভিমানে পরের দিন বুধবার সকালে স্বামী মাঠে প্রাতঃকৃত্য করতে গেলে ও ছেলেরা স্কুলে গেলে ওই মহিলা কেরোসিল তেল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে এলাকার লোকজন জানান। পরের দিন ভোরে ওই বধূ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তবে সালিশি সভার কথা স্থানীয় উত্তর চণ্ডীপুরের ফাঁড়ি পুলিশ কিছুই জানত না বলে অভিযোগ। পরে অগ্নিদগ্ধ বধূর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি শোনার পরই পুলিশ নড়েচড়ে বসে। জেলা পুলিশ সুপারও স্বীকার করেন ধর্ষণ ও সালিশি সভার কথা পুলিশের জানা ছিল না। তবে পুলিশ মৃত বধূর স্বামীর কাছ থেকে অভিযোগ না নিয়ে কেন ওই বধূর শ্বশুরের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “মৃত গৃহবধূর স্বামী অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্যস্ত ছিলেন।” পুলিশের দাবি, মৃত বধূর স্বামী ও পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথ বলে সালিশি সভায় গ্রামের কে কে ছিলেন, সেই তালিক তৈরি করা হচ্ছে।