একে রোগ সংক্রমণে উৎপাদন কম। তায় আবার কেজি প্রতি দামও কম মিলছে। মরসুমের শুরুতেই জোড়া ‘আক্রমণে’ জর্জরিত দার্জিলিঙের কমলা চাষিরা।
কমলালেবুতে রোগ সংক্রমণ অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। গত বছরেও রোগের প্রকোপে কমলা উৎপাদন ব্যপক মার খায়। এ বছর তুলনায় ফলন ভাল হলেও, আশানুরূপ নয় বলে চাষিদের দাবি। তবে গতবার লেবু প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা দরে দাম পেলেও, এবারে সে দাম ২ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। চাষিদের একাংশের দাবি, গত বার ফলনের ঘাটতি দামে পুষিয়ে গিয়েছিল, এবারে সেই উৎপাদনের ঘাটতির সঙ্গে দামও কমে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। লাবদা এলাকার কমলা চাষি ও সরবারহকারী বলদেব মুখিয়া বলেন, “কমলা প্রতি দামে গড়ে ২ টাকা করে মিলছে। বাজার খুব ভাল থাকলে ৩ টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে।”
দার্জিলিঙের কমলার দাম কমছে কেন? ব্যবসায়ীদের মতে, এবারে যে ফলন হয়েছে, তার গুণগত মান ভাল নয়। বলদেববাবু লাবদা সহ দার্জিলিঙের সিটং, মঙপু থেকেও কমলা সংগ্রহ করে শিলিগুড়ির বাজারে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “গাছে থাকতেই কমলা খসে পড়ছে। যে কমলাগুলি মিলছে তার অনেকটাই সহজে পচে যাচ্ছে। সে কারণেই দাম কম পাওয়া যাচ্ছে।” একই কথা জানালেন কমলার পাইকারি ব্যবসায়ী সন্দীপ ছেত্রীও। তাঁর কথায়, “গত বারের তুলনায় ফলন বাড়ছে এটা ভাল কথা, কিন্তু কমলা বিক্রি করে দাম পাচ্ছি না।” এক একটি গাছে যেখানে মরশুমে ৫ থেকে ৬ হাজার কমলা পাওয়ার কথা সেখানে গত বছর গড়ে ২ হাজার কমলা মিলেছিল। এ বারে গাছ প্রতি গড় উৎপাদন আড়াই হাজারের কাছাকাছি বলে জানানো হয়েছে। তবে সন্দীপবাবু অবশ্য বাজারে নাগপুরের কমলা চলে আসায় দাম মিলছে না বলে দাবি করেছেন। তবে, ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, প্রতি বছরই নাগপুরের কমলা আসে। তার জেরে দার্জিলিঙের কমলালেবুর বাজার পড়েনি। এ বারে গুণগতমান খারাপ হওয়াতেই দাম কম মিলছে।
কমলা-সমস্যায় ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে জিটিএ। জিটিএ-এর কৃষি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কল্যাণ দেওয়ান বলেন, “কী ভাবে চাষ করলে ভাল ফল মিলবে তা নিয়ে কমলা চাষিদের সচেতন করা হচ্ছে। কমলালেবুর রোগ রুখতে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞদের একটি দল গড়া হয়েছে। সেই দল সমীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করেছে।”
তবে চাষিদের একাংশ দাবি করেছেন, মরসুমের শুরুতে রোগের প্রকোপ থাকলেও, পরে সে সমস্যা থাকবে না। তাঁদের আশা, চলতি মাসের শেষ থেকে ভাল কমলালেবু পাওয়া যাবে। দামও মিলবে।