শহর বাঁচাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই বৃক্ষরোপণ

কুলিক পক্ষিনিবাসে গত তিন দশকে দেদার গাছ কাটা হলেও তার তুলনায় শহরে সে ভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। তাঁদের আশঙ্কা, “শহর জুড়ে ধারাবাহিকভাবে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া না হলে অচিরেই শহরে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়বে।”

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৪
Share:

রায়গঞ্জ মিউনিসিপ্যাল পার্কে পুরসভার তরফে লাগানো হয়েছে বহু গাছ। —নিজস্ব চিত্র।

কুলিক পক্ষিনিবাসে গত তিন দশকে দেদার গাছ কাটা হলেও তার তুলনায় শহরে সে ভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি।

Advertisement

তাঁদের আশঙ্কা, “শহর জুড়ে ধারাবাহিকভাবে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া না হলে অচিরেই শহরে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়বে।”

বন দফতর সূত্রের খবর, গত তিন দশকে রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দফতর, হাসপাতাল ভবন, বহুতল ও ব্রডগেজ রেললাইন তৈরির জন্য কয়েক হাজার প্রাচীন গাছ কাটা পড়েছে। উল্টো দিকে, সেই অনুপাতে গাছ লাগানো না হওয়ায় পরিবেশ দূষণের যেমন আশঙ্কা রয়েছে, তেমনই বাসিন্দারা শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা, চর্মরোগ-সহ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ দূষণ বিরোধী প্রচার চালানোর কাজ করছে রায়গঞ্জের কাইন্ডনেস অ্যান্ড কেয়ার টু অ্যানিম্যালস সোশ্যাল ট্রাস্ট নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তার ম্যানেজিং ট্রাস্টি ভীমনারায়ণ মিত্র বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে গত তিন দশকে শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় যেভাবে বিপুল পরিমাণে বৃক্ষনিধন হয়েছে, সেই তুলনায় গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তিনদশকে শহরে যানবাহনে সংখ্যা কয়েকগুন বেড়েছে। ফলে অবিলম্বে শহরের সর্বত্র গাছ লাগানো না হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাসিন্দা ও পশুপাখিদের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

রায়গঞ্জ পুলিশের (ট্রাফিক) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন শহরে প্রায় দুই লক্ষ মোটরবাইক এবং ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার পেট্রল ও ডিজেলচালিত যানবাহন চলাচল করে। রায়গঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের অফিসারেরা জানান, গত এক দশকে রায়গঞ্জে ডিজেল ও পেট্রোলচালিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। প্রতিদিনই পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।”

গাছ লাগানোর কাজে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের উপর ভরসা রাখতে না পেরে সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক জন পরিবেশপ্রেমী ব্যক্তিগতভাবে গাছ লাগানোর কাজে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে সন্দীপ সরকার বলেন, “বৃক্ষনিধন ও দূষণের জেরে যাতে ভবিষ্যতে পাখিদের খাবারের সঙ্কট দেখা না দেয়, তারজন্য আমরা কিছু ফলের গাছও লাগিয়েছি।” আর দুজন অরূপ মিত্রের আশঙ্কা, “কোনও সাহায্য না মিললে কত দিন এ ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছ লাগানোর কাজ চালানো যাবে, তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে রয়েছেন।”

গাছের ঘাটতি মেটাতে কয়েক বছর ধরে পুরসভার তরফে কয়েক বছর ধরে রায়গঞ্জ মিউনিসিপ্যাল পার্কে বহু গাছ লাগানো হয়েছে। আর কিছুটা হলেও তাতে আশার আলো দেখছেন শহরের বাসিন্দা ও পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ। নির্মল আবহওয়ায় সময় কাটাতে প্রতিদিনই মিউনিসিপ্যাল পার্কে বাসিন্দা ও কচিকাঁচাদের ভিড় বাড়ছে। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তও জানান, শহরে পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় দূষণ বাড়ছে। দূষণ রুখতে পুরসভার তরফে শহরে ৪০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, থালা, বাটি ও গ্লাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাব থাকায় পুরসভা এলাকায় ধারাবাহিকভাবে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া যাচ্ছে না।

মোহিতবাবুর দাবি, গত তিন বছরে পুরসভার তরফে শহরের শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা মোড় পর্যন্ত রাস্তার ধারে প্রায় ৫০০টি গাছ লাগানো হয়েছে। বাসিন্দারা সেগুলির দেখভাল না করায় বহু গাছ মরে গিয়েছে। বাসিন্দাদেরই এই দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা ভাবছি, এখন থেকে শহরে ফ্ল্যাট বা বহুতল নির্মাণের সময়ে কর্তৃপক্ষকে পর্যাপ্ত গাছ লাগানোর অনুরোধ করা হবে। আমরাও শহর জুড়ে ধারাবাহিকভাবে গাছ লাগাব।”

রায়গঞ্জ পুরসভার তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায় জানান, বাসিন্দাদের একাংশের সচেতনতার অভাবে গত তিন বছরে পুরসভার লাগানো বহু গাছ মরে গিয়েছে। তাঁরও মত, বাসিন্দারা সচেতন না হলে শহরের সবুজায়ন সম্ভব নয়।

হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেকার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্য জানান, যে সব হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলে জায়গা রয়েছে, সেই জায়গায় শীঘ্রই সংগঠনের তরফে পর্যাপ্ত গাছ লাগানো হবে।

রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিকও স্বীকার করছেন, “নানা প্রশাসনিক কারণে ধারাবাহিক ভাবে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবে বহু গাছ মরে গিয়েছে। দ্রুত শহর জুড়ে ধারাবাহিকভাবে গাছ লাগানোর কর্মসূচি শুরু করার চেষ্টা করছি।”

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও:
www.facebook.com/anandabazar.abp

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন