স্কুলে চুরি রুখতে ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানোর পরামর্শ দিল উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশ। গত রবিবার রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলে চুরির পরে শিক্ষক-অভিভাবক মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই ঘটনায় ১ জনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই সুবাদে আরও একজন ধরা পড়েছে। আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে। এর পরেই পুলিশের তরফে স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের ডেকে সিসিটিভি বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
পুলিশের ওই পরামর্শ নিয়ে স্কুল মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একপক্ষ মনে করছেন, পুলিশের পরামর্শ যুক্তিযুক্ত। অন্য পক্ষের মত, পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে তদন্তে গতি আনা, নজরদারি বাড়ানো কিংবা দক্ষ অফিসারদের কাজে লাগানোর ব্যাপারে জোর না দিয়ে সিসিটিভি বসানোর পরামর্শ দিলে সমস্যা মিটবে না। তাঁদের মতে, দুষ্কৃতীরা সিসিটিভি নষ্ট করে চুরি করবে না সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, “হাইস্কুল চত্বরে চুরি বা যে কোনও ধরণের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সিসিটিভি তদন্তের কাজে সহযোগিতা করবে। সিসিটিভি থাকলে দুষ্কৃতীদের যেমন সহজেই চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। অপরাধও কমবে বলে আমাদের ধারণা। আমরা তাই শহরের বিভিন্ন বড় স্কুল কর্তৃপক্ষকে সিসিটিভি লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছি। সুষ্ঠভাবে স্কুল পরিচালনার স্বার্থে স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা।” পুলিশ সুপারের দাবি, “বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি সংস্থায় সিসিটিভির ব্যবহার বাড়ায় অপরাধের ঘটনা কমেছে। শহর জুড়ে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। নজরদারির সঙ্গে সিসিটিভি লাগানোর বিষয়টি তুলনা করা ঠিক নয়।” রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তীও মনে করেন, সিসিটিভি থাকলে দুষ্কৃতীরাও পরে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে স্কুলে ঢুকে চুরি করার সাহস পাবে না। পুলিশের ওই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন উত্তর দিনাজপুরের বিদ্যালয় পরিদর্শক নারায়ণ সরকার। তিনি বলেন, “কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি লাগানোর জন্য আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করলে সরকারি নিয়মে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
উল্লেখ্য, রবিবার ভোররাতে পাঁচ জনের একটি দুষ্কৃতীর দল রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের ঘর সহ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার অফিস ঘর, নিউট্রেশন ক্লাসরুম, ক্যন্টিন ও টিচার্স কমনরুমের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে একাধিক আলমারি ভেঙে নগদ টাকা, একাধিক স্মারক, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম সহ ১০ হাজার টাকার সামগ্রী চুরি করে পালায়। গত ৩১ ডিসেম্বর রায়গঞ্জ গার্লস হাইস্কুল চত্বরে থাকা ছাত্রীদের হস্টেলের ১০টি ঘরের তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা একাধিক ট্যাপকল, সাইকেল, বাসনপত্র চুরির করার পাশাপাশি ছাত্রীদের ট্রাঙ্ক ভেঙে পোশাক ও বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করে পালায় বলে অভিযোগ। স্কুল চলাকালীন রায়গঞ্জের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবন হাইস্কুল চত্বর থেকে সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।
রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি আর্থিক বরাদ্দ না পেলে আমাদের পক্ষে স্কুলচত্বরে সিসিটিভি লাগানো সম্ভব নয়। স্কুলের তরফে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জানানো হবে।” রায়গঞ্জ গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুছন্দা দাসও জানান, সরকারি বরাদ্দ না পেলে এ কাজ সম্ভব নয়। রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্রের প্রধান শিক্ষক অভিজিত দত্ত, রায়গঞ্জ মোহনবাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নরেশচন্দ্র দাস ও রায়গঞ্জের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক নীলমাধব নন্দী পৃথকভাবে জানিয়েছেন, স্কুলের নিজস্ব কোনও তহবিল না থাকায় তাঁদের পক্ষে সিসিটিভি লাগানো সম্ভব নয়।
এবিটিএর উত্তর দিনাজপুর জেলা সহ সভাপতি উত্পল দত্ত বলেন, “স্কুলগুলিতে চুরির ঘটনা ঘটতে থাকায় পুলিশের স্কুলগুলির নিরাপত্তার স্বার্থে নজরদারি বাড়ানো উচিত। স্কুলের নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্য সরকারকেই সিসিটিভির ব্যবস্থা করতে হবে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সঙ্গে কথা বলে দেখছি জেলার বড় হাইস্কুলগুলির নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সিসিটিভি বরাদ্দ করা যায় কি না।”